কুবি ছাত্রদলের র্যাগিং
শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মেরে বললেন ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’

কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:২১ পিএম

ফলো করুন |
|
---|---|
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় উঠে এসেছে ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ। এ সময় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মেরে বলা হয়, ‘আমরা তোদের বাপ লাগি।’
বিভাগীয় শ্রেণিকক্ষে দরজা বন্ধ করে র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শয়ন দাস ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত শয়ন দাস কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভর কর্মী বলে জানা গেছে।
র্যাগিংয়ের শিকার একাধিক শিক্ষার্থী ও বিভাগীয় প্রধান সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিভাগের প্রথম ক্লাশে অংশ নিতে আসা নবীনদের ক্লাসরুমে আটকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। তাদের বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে হেনস্তা করা হয়। পরিচয় দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মেরে শয়ন দাস বলেন, ‘আমরা তোদের বাপ লাগি।’
আরেক শিক্ষার্থীর শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার শার্ট টেনে ধরলে, হাতের ডায়ালাইসিসের ক্যানুলা খুলে যায়। পরে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী কিডনি রোগী এবং তার ডায়ালাইসিস চলমান রয়েছে।
অভিযোগে আরও উঠে আসে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হুমকির সুরে বলেন- কার কাছে বিচার দিবি? ম্যানার শেখানোর জন্য টিচাররাই আমাদের পাঠিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, ওয়াহিদ নামে জার্সি পরা একজন আমাদের সিআরকে থাপ্পর মারেন। তারপর বলেন, ‘আমরা তোদের বাপ লাগি।’
এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন, পরিচয়ের নামে গালিগালাজ করা হয়। একপর্যায়ে শয়ন নামের একজন এক বন্ধুর গায়ে হাত তোলেন। এতে আমরা ভয় পেয়ে যাই।
অভিযোগ রয়েছে, শার্টের হাতা ভাঁজ করা দেখে এক শিক্ষার্থী তাকে হ্যাঁচকা টান দেন, এতে করে ডায়ালাইসিসের জন্য হাতে থাকা ক্যানুলা খুলে যায়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী শয়ন দাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইরফান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। কোনো র্যাগিং হয়নি। যাদের ডায়ালাইসিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় ক্যানুলা খুলে গেছে।
মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার বড় ভাই বিভাগীয় প্রধানের কাছে বিস্তারিত জানান। আমি তখন উপস্থিত ছিলাম। এরপর আমরা অভিযুক্ত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি এবং অনুসন্ধান করে তাদের শনাক্ত করি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ শয়ন দাসকে তার কর্মী নয় বলে অস্বীকার করেন। তার মতে প্রোগামে তো সিনিয়র জুনিয়র দলীয় বহুজন আসে।
প্রক্টর আবদুল হাকিম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাশ ও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে।