Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

ডাকসু নির্বাচনে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম

ডাকসু নির্বাচনের ১৯ দফা ও ১৪৮টি দাবি সম্বলিত দীর্ঘ ইশতেহার প্রকাশ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা আমূল বদলে ফেলার রূপরেখা তুলে ধরেছে সংগঠনটি।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে পুনরায় কুরআনের আয়াত ‘রাব্বি জিদনি ইলমি’ সংযোজন এবং মুসলমানদের স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রবক্তা আল্লামা ইকবাল ও পাকিস্তানের স্থপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে হল নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে।

জয়বাংলা ও জয় শ্রীরাম স্লোগান নিষিদ্ধ এবং কাউকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ বললে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে মুসলিম জাতীয়তাবাদী সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।

বৃহস্পতিবার সংগঠনের আহ্বায়ক ও ডাকসুর ভিপি প্রার্থী আব্দুল ওয়াহেদ এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলা সালতানাত পুনঃপ্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী পুনর্গঠন’ শীর্ষক এ ইশতেহার তুলে ধরেন। 

এ সময় সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব ও ডাকসুর সদস্য প্রার্থী মুহিব মুশফিক খান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েত উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহারের শুরুতে হিন্দু-বৌদ্ধ-ইসলাম ধর্মালম্বীদের মাধ্যমে সৃষ্ট ৫ হাজার বছরের বাংলা সভ্যতা, বাংলা সালতানাত, উপনিবেশ বিরোধী লড়াই, মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃসম্পর্কের দীর্ঘ বর্ণনা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, উপমহাদেশের মুক্তিকামী মুসলিম নেতারা ১৯০৬ সালে শাহবাগের ইশারাত মঞ্জিলে (বর্তমান মধুর ক্যান্টিন)  মুসলমানদের প্রথম রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ ও ১৯২১ সালে একই জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরমধ্যে মুসলিম লীগ আমাদের ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের নামে প্রথম স্বাধীনতা ও রিপাবলিক উপহার দিয়েছিল। অন্য দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তান অর্জনে ভূমিকা রাখার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেয়। 

বাংলাদেশের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া বাংলা সালতানাত খর্বিত আকারে হলেও ফেরত এসেছে উল্লেখ করে ইশতেহারে প্রশ্ন তোলা হয়, চীনের হান ও মধ্যপ্রাচ্যের আরবদের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জাতি বাঙালির কেন বড় মানচিত্র, সমৃদ্ধ অর্থনীতি, স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও আত্মরক্ষা করার সামরিক শক্তি নাই?

আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গর্বিত সভ্যতা ও বৃহত্তম জাতির সন্তান হয়েও আমরা যে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় আছি তার অবসানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে জাতীয় জাগরণের ডাক দিতে চাই। আমরা চাই এ বিশ্ববিদ্যালয় আত্মপরিচয়কে ধারণ করে বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী নেতৃত্ব অর্জনের লক্ষ্যে সমালোচনামূলক অনুসন্ধান, প্রমাণ-ভিত্তিক গবেষণা, অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা এবং মানব সম্ভাবনার সামগ্রিক বিকাশের নীতির আলোকে পৌত্তলিক-ফ্যাসিস্ট-নিপীড়ক অচল কাঠামো ভেঙে একবিংশ শতাব্দীর মানদণ্ডে বুদ্ধিবৃত্তিক দুঃসাহস, অবিচল মেধাতন্ত্র এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে একটি আধুনিক, গতিশীল এবং অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠিত হবে।

ইশতেহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুত সময়ে বিশ্বের শীর্ষ-১০০ র‍্যাঙ্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে একে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত স্বায়ত্ত শাসন থেকে বের করে শতভাগ স্বাধীন একাডেমিয়ায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।  এতে রাষ্ট্রপতিকে চ্যান্সেলর করার বিধান বাতিল ও ভাইস চ্যান্সেলর পদ বিলুপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নেতৃত্বের জন্য  একজন আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাবিদ ও একাডেমিক প্রশাসককে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ ও স্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া বিশ্বমানের বেতন কাঠামো তৈরি করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এআই ও রোবটের মাধ্যমে আটোমেশন ও ৭০ ভাগ কাজে শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।

 ইশতেহারে ৫ বিলিয়ন ডলারের কেন্দ্রীয় গবেষণা তহবিল; ভঁর্তি প্রক্রিয়া, অ্যাকাডেমিক কাঠামো, সিলেবাস সংস্কার ও গ্রেড মুল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার; মার্কিন ও চীনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্তর্জাতিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে ফ্ল্যাগশিপ গ্লোবাল প্লেসমেন্ট ও ক্যারিয়ার সেন্টার এবং আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে তুলতে স্টার্টআপ হাব প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। 

ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করে শিক্ষার্থীদের উচ্চ অঙ্কের বৃত্তি, বিনা সুদের কর্যে হাসানা ঋণ, পার্ট টাইম চাকরি, শিক্ষা ও গবেষণা সহকারী হিসেবে নিয়োগ, উচ্চতর ক্যারিয়ার গড়ার সহায়তা এবং গবেষণা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের শীর্ষ-১০০ র‍্যাঙ্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে সব অ্যাকাডেমিক ভবন, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, আবাসিক হল, ডাইনিং ও ক্যান্টিন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণ করার জন্য এর বেহাত জমি তথা বর্তমান সচিবালয়, মন্ত্রীপাড়া ও অফিসারস কোয়ার্টারসহ সকল অবৈধ স্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ফেরত;  রাজধানীর পুরাবচলে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস, সৌদি আরবে তৃতীয় ক্যাম্পাস, কক্সবাজারে মেরিটাইম ক্যাম্পাস ও রাজধানীর অভিজাত এলাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের লাক্সারিয়াস আবাসন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যলায়ের সকল লাইব্রেরি ও ছাত্রী হল সপ্তাহের সব দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা;  হলের সকল শিক্ষার্থীর জন্য এক বেড এক টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা ও সকল কক্ষে এসি ইনস্টল ও ফ্রিজ সরবরাহ;  প্রয়োজনীয় সংখ্যক আবাসিক হল নির্মাণ করার আগে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভাতা প্রদান করা হবে। বিবাহিত শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট সম্বলিত পৃথক দুটি আবাসিক হল নির্মাণ,বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য ৫০ভাগ মূল্য ভর্তুকি প্রদান এবং আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, সন্ত্রাসাবাদী-সাম্প্রাদায়িক-রাজনৈতিক গ্রুপের হামলায় কোনো শিক্ষার্থী নিহত হলে ২০ কোটি টাকা, ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীকে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে ১০ কোটি টাকা, মারধরের অঙ্গহানি হলে ৮ কোটি টাকা এবং জখম হলে ৩কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে।

প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল নবীজীর (সা.) জন্মদিন উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী উদাযাপন কর্মসূচি পালন  করা। ১ ফেব্রুরারি আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস পালন করা হবে।  ২০ তলা বিশিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণ ও দুটি ফ্লোরে নারী মুসল্লীদের জন্য সংরক্ষণ;  

আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) অবমাননাকারী তথা শাতিমদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার; বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম বিদ্বেষী, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, অখণ্ড ভারতপন্থী, আল কায়েদা-আইসিস-ইস্কন-শিব সেনাসহ যেকোনো জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা নিষিদ্ধ; শিক্ষার্থীদের খ্যাত, গ্রাম্য, আনকালচারড, গ্রামের চাচাতো ভাই সহ যেকোনো বর্ণবাদী সম্বোধন করলে জরিমানা ও বহিষ্কার করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হত্যার শিকার শহীদ নাজির আহমেদাহ পরবর্তী সকল হত্যার বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। শ্ববিদ্যালয়কে সকল ধরণের দেশী-বিদেশী অস্ত্র মুক্ত করা হবে। ক্যাম্পাসে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। নিরস্ত্র ক্যাম্পাস পুলিশ গঠন করা হবে এবং শিক্ষার্থীরা পার্ট টাইম চাকরি হিসেবে নিয়োগ পাবে।

ছাত্রীদের ব্যক্তিগত পরিচয় ও তথ্যের নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ধারণের মানবাধিকার সুরক্ষার নীতির আলোকে হল, শ্রেণী কক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিচয় নিশ্চিত করতে চেহারা দেখানোর নিয়ম বাতিল। পরিচয় নিশ্চিত করতে গোপন পিন নম্বর, কিউআর কোড ও ডিজিটাল আইডি কার্ড ব্যবহারের নিয়ম প্রণয়ন। ছাত্রী হল ২৪ঘণ্টা উন্মুক্ত রেখে খার ব্যবস্থা করা হবে এবং ছাত্রীদের যেকোনো সময় প্রবেশের সুযোগ থাকবে।  ছাত্রীদের সুরক্ষায় প্রতি হলে ২৪ ঘণ্টা প্রক্টরিয়াল নিরাপত্তা টিম মোতায়েন থাকবে। ছাত্রী হলগুলোকে শতভাগ নারী কর্মী নিয়োগ ও পুরুষ কর্মচারী নিষিদ্ধ করা হবে।

ছাত্র রাজনীতির নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।  কোন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী হত্যা ও ধর্ষণে জড়িত হলে সেই সংগঠন ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকসু নির্বাচন ২০২৫


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম