ঢাবির চার শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হলছাড়া করার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের চার শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তার নাম সিয়াম রহমান। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থী হলেন- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আলম বাদশা (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), একই বিভাগের লুতফুর রহমান, আরবি বিভাগের আশিকুর রহমান (২০১৮-১৯) এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের আল-আমিন।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হলের ৪৫০ নম্বর কক্ষে (সিয়াম রহমানের রুম) মারধরের ঘটনা ঘটে।
চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের সময় সিয়াম রহমানের সঙ্গে ছিলেন ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ, সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ, উপ-আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা, সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই ও আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব। হামিদ কারজাইও মারধরে অংশ নেন। ঘটনার পর ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপর তারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আলম বাদশা বলেন, হলের অবৈধ শিক্ষার্থী সুমন আহমেদকে হলে রাখাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার আনুমানিক ৩টার সময় আব্দুল আহাদ (হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) আমাদেরকে ডেকে ৪৫০ নম্বর রুমে নিয়ে যান। সেখানে সিয়াম রহমান এবং সুমন আহমেদের সঙ্গে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, উপ আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা, সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই এবং আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব।
তিনি বলেন, রুমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর মোবাইল চেক করতে থাকে। কিন্তু কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। শুধু লুতফুর ভাইয়ের একটা পোস্ট পেয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে। সেটাও ছিল খুব লজিক্যাল। কিন্তু তারা লজিক শোনার আগেই মারধর শুরু করেন। এটা নাকি সরকারবিরোধী ছিল। কিল, ঘুসি ও লাথি দিতে থাকেন আমাদের।
তিনি আরও বলেন, সিয়াম রহমান দফায় দফায় আমাকে মারধর করেন। আমাকে চুল ধরে টানে, বুকে লাথি দেয়, চড়-থাপ্পড় মারে। আমাদের চারজনকেই তিনি মেরেছেন। পরে হামিদ কারজাই আমাকে শিবির করিস বলে নির্যাতন করেন।
মুচলেকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক আলাদা চারটি মুচলেকা নেওয়া হয় এই বলে যে, ‘আমরা বর্তমানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নই। অন্যায়ভাবে সুমন আহমেদকে রুম থেকে বের করেছি। হল থেকে স্বেচ্ছায় বের হয়ে যাব।’ নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমরা লিখতে বাধ্য হই।
বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্যাতন করতে করতে আমাদের ৫ ঘণ্টা পর রাত ৮টার সময় বের করে দেয়। আমরা ভয়ে হলে আর অবস্থান করিনি। রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। আজ (বুধবার) আমরা প্রভোস্ট স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা এর বিচার চাই। হলে থাকতে চাই। কারণ নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে হলে থাকা আমাদের অধিকার।
তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান। তার দাবি ভুক্তভোগীরা পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দিয়েছিল। সে কারণে কোনো ঝামেলায় না জড়িয়ে স্বেচ্ছায় হল ত্যাগ করবে বলে মুচলেকা দিয়েছে।
আর সুমন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ওদেরকে কাউকে মারধর করা হয়নি। এটা একটা সাজানো নাটক। বরং তারা আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়। ৫ মিনিটও আমাকে রুমে অবস্থান করতে দেয়নি। আমাকে কেন্দ্র করে ঝামেলার সূত্রপাত নয়। বরং আমিই ঘটনার ভুক্তভোগী।
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, আমরা পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি। ইতোমধ্যে হল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, প্রক্টর অফিস এ বিষয়ে অবগত আছে। তবে হলে যেসব ঘটনা ঘটে, সেগুলো সাধারণত হল প্রশাসন দেখে থাকে। হল প্রশাসন যদি মনে করে তাহলে তারা অফিসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আমার জানামতে তদন্ত কমিটি হয়েছে। শিগগিরই তারা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ অবগত। শিগগিরই তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
