আ.লীগপন্থি তিন ডিনের অফিসে তালা দিয়েছেন রাকসু নেতারা
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামী লীগপন্থি ডিনদের পদত্যাগের দাবিতে তিন ডিনের কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) প্রতিনিধিরা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে থাকা এসব কার্যালয়ে তারা তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ডিনদের অপসারণের বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হলে কার্যালয়গুলোর তালা খুলে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ ছয়টায় জরুরি বৈঠকে বসবেন উপাচার্য।
কার্যালয় তালাবদ্ধ করা ঘটনায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবির নেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদের ডিনদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।
তালা লাগানো তিনটি অনুষদের আওয়ামীপন্থি ডিনরা হলেন- আইন অনুষদের অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ; ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অধ্যাপক অধ্যাপক এএসএম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অধ্যাপক এসএম এক্রাম উল্ল্যাহ।
এ সময় ‘তারা আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, আওয়ামী লীগ গেলি কই’ ‘আওয়ামী লীগের চামড়া তুলে নেব আমরা’, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ সময় সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি আকিল বিন তালেব বলেন, অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আমাদের নিরাপত্তা গুরুতর সংকটে পড়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে; যা আমাদের গণঅভুত্থানের পক্ষের শক্তির জন্য হুমকি।
তিনি বলেন, জুলাইয়ের এক বছর পরেও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখা হয়েছে। সিনেট কার্যকর না হওয়ায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সিন্ডিকেটে ৬ জন আওয়ামীপন্থি ডিন রয়েছেন। তারা এখানে বসে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। আমরা চাই না, ক্যাম্পাসে আওয়ামীপন্থি কোনো শিক্ষক মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক। যারা এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করতে চায় তাদেরও পদত্যাগ করতে হবে।
এদিকে রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন- আজ মোটামুটি সব আওয়ামীপন্থি ডিনদের দপ্তরগুলো তালাবদ্ধ। আমিও এটাই চাই, বিচার না হওয়া পর্যন্ত তালাবদ্ধ থাকুক। সঙ্গে একটা তালিকা করেছি, বিগত জুলাইয়ের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করা শিক্ষকদের। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য সংগঠনের কাছে থাকা তালিকাও আহ্বান করছি। আমার তালিকায় অনেকে বাদ পড়তে পারে সেটা আপনাদের থেকে সংগ্রহ করব আগামী তিন দিনের মধ্যে।
পদত্যাগের বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম এক্রাম উল্লাহ বলেন, আমি এ পরিস্থিতিতে ডিন হিসেবে দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছি না। উপাচার্যের কাছে আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। উপাচার্য যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা চাই না, কোনো শিক্ষক লাঞ্ছিত হোক।
কর্মসূচিতে রাকসুর সহ-সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, ডিন, সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১২টি অনুষদের মধ্যে আওয়ামীপন্থি ‘হলুদ প্যানেল’ থেকে ছয়জন ডিন নির্বাচিত হন। তাদের মেয়াদ গত ১৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। কিন্তু উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব গত ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব বহাল রাখার নির্দেশ দেন।
