Logo
Logo
×

রাজধানী

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ

উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্ৰস্তদের পরিবার।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে মাইলস্টোনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন আহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।  

সংবাদ সম্মেলনে আহত রায়হান তৌফিকের বাবা মনির হোসেন স্বপন অভিযোগ করে বলেন, যারা আহত হয়ে বিছানায় বা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, তাদের একজন আমার ছেলে। আমার ছেলেটাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন, তার শরীরের ২২% পুড়ে গেছে এবং তাকে ৫৫ দিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফিরতে হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি তার হাত বা শরীর বেঁকে যায় কিনা। তাকে এমন একটি বিশেষ পোশাক পরিয়ে রাখতে হয়, যার কারণে সে সোজা বা বাঁকা হতে পারে না। ঘটনার দুই মাস অতিবাহিত হলেও সরকার বা বিমান বাহিনী আমাদের পাশে কেউ এসে দাঁড়ায়নি। 

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া-নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। 

১. মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। 

২. আমরা যা হারিয়েছি তা অমূল্য। কোন কিছুর বিনিময়ে সেই ক্ষতির দাম নির্ধারণ করা যাবে না। গত ২২ জুলাই এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জনস্বার্থে রিটকৃত রিট নং ১১৮৪২/২০২৫ এ উল্লেখিত নিহতদের জন্য ৫ (পাঁচ) কোটি এবং আহতদের জন্য ২ (দুই) কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।   

৩. বিমান দুর্ঘটনায় আহত অনেককে দীর্ঘ চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। তা ছাড়া ডাক্তারদের ভাষ্য মতে, আগুনে পোড়ার কারণে আহতরা হঠাৎ বিভিন্ন ধরণের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবে। এর চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তাই আহতরা সিএমএইচ/সরকারি হাসপাতালে যেন আজীবন ফ্রি চিকিৎসা (ওষুধসহ) পেতে পারে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে। 

৪. দুর্ঘটনায় আহতদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে না। তাদেরকে সরকারি চাকরি প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

৫. এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের কথা স্মরণ করতে প্রতি বছর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২১ জুলাই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে যেন পালন করা হয় সে জন্য সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

৬. বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের অনেককে সিটি কর্পোরেশনের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে, তাদের কবরগুলো স্থায়ী কবর হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।

৭. দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট, শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও আয়াসহ সকলকে শহীদী মর্যাদা (সনদ এবং গেজেটসহ) ও সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

৮. বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে উত্তরায় একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে নিহত তাসনিয়া হকের বাবা নাজমুল হক বলেন, ২১ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। সেদিন দুপুর ১টা ১২ মিনিটে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। ঘটনাস্থলে কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্টাফ নিহত এবং অনেকে আহত হন। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা পুরো জাতি তথা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়। ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন এবং পরদিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত পাইলটসহ ৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যার মধ্যে রয়েছে ২৮ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন অভিভাবক, ৩ জন শিক্ষক এবং স্কুলের স্টাফ মাসুমা বেগম। এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ৯ জন, আর যারা চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন তারাও নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, আমরা বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের সদস্যরা আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমাদের প্রিয় সন্তানদের কবর দিয়ে প্রতিনিয়ত দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি। আহতদের ফিজিওথেরাপি, ড্রেসিং, গ্রাফটিংসহ দীর্ঘ চিকিৎসার ব্যয় ও যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশের নয়। অনেক শিশু ও শিক্ষক আছেন যাদের অবস্থা এতটাই গুরুতর যে তারা হয়তো আর কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। দুর্ঘটনার পর প্রথম দিকে কিছু খোঁজখবর মিললেও বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ পাশে নেই। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও আমাদের সঙ্গে করেননি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সন্তানদের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মুখগুলো আমরা কবরে রেখে এসেছি। এই অমানবিক ট্র্যাজেডির সঠিক কারণ উদঘাটন করতে হবে। হতাহত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ফলোআপ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আমাদের সন্তানরা স্কুলে ছিল, সরকারের যুদ্ধবিমান স্কুলে গিয়ে পড়েছে। পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি। এ বিমান যে কোনো জায়গায় মানুষের ওপর পড়তে পারত। তাই এর দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। আমাদের দাবি, সরকার যেন দ্রুত এ দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায়। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন, নিহত সামিউলের বাবা রেজাউল করিম শামীম, আহত জায়ানা মাহবুবের মা সানজিদা বেলায়েত প্রমুখ। 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম