বিএসএমএমইউতে ক্যান্সার জয়ী ৭০ শিশুর একদিন
মিজান মালিক
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:০৬ পিএম
বিএসএমএমইউতে ক্যান্সারজয়ী শিশুদের মিলনমেলা। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিএসএমএমইউতে ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ একশতেরও বেশি শিশু। অথচ মানুষ মনে করেন ক্যান্সারের ভালো চিকিৎসা নেই৷ বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসা নেই। দেশের সীমানা পার হওয়া ছাড়া যেন গতি নেই। অথচ নীরবেই ঘটে চলেছে এ বিপ্লব।
এমন সৌভাগ্যবান শিশুদের নিয়ে আজ শনিবার বিএসএমএমইউতে এ ব্লকের ২ তলায় চমৎকার একটা মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তাদের আনন্দে অংশ নিয়েছেন ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ ৭০জন শিশু।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বিএসএমএমইউ) শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক শিশু ক্যান্সার দিবস ২০২০। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকালে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল চত্বরে র্যালি বের করা হয়। পরে হাসপাতাল অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহানা আক্তার রহমান। অনুষ্ঠানে ৭০জন ক্যান্সার জয়ী শিশুদের নিয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, গান, গজল, হামদ-নাত ও নৃত্য পরিবেশন করে শিশুরা। পরে ক্যান্সার জয়ী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এসময়, আক্রান্তদের কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। ছড়া পরিবেশন করে ক্যান্সার জয়ী সাড়ে তিন বছর বয়সের লামিয়া, ৮বছর বয়সী আরাফাত ইসলাম আলভী, আরভীও প্রায় সাড়ে তিন বছর ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় বর্তমান বিশ্বে এক মাইলফলক বাংলাদেশ। বাংলাদেশেই এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা হচ্ছে এবং প্রথম দিকে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে নিরাময় সম্ভব। তবে, একটি শিশু যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তখন তাদের বাবা মায়ের সব সাজানো স্বপ্নগুলো যেন একে একে ভেঙ্গে যেতে থাকে। আর গ্রাস করে কালো অন্ধকার। চলে হাসপাতাল আর ডাক্তারের কাছে ছুটাছুটি।
চিকিৎসকরা জানান, ৭০জন ক্যান্সার জয়ী শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পেরে ভাল লেগেছে। কারণ তারা শুধু ক্যান্সার জয়ই করেনি রোগ তাদের চলার পথকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও আজ তারা তাদের মেধা, সাহস আর মা বাবার প্রেরণায় মূল স্রোতে মিশে গেছে।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আর যার বড় অংশই হচ্ছে শিশু। ১৯বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সারা বিশ্বে ৩ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত লাখেরও বেশি।
২০৩০ সালের মধ্যে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ৬০শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যা বর্তমান নিরাময় সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।
হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সার বিভাগ স্থাপিত হয়। এ পর্যন্ত অনেক ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নিয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন। এছাড়া, ২০১৮সালে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮হাজার এবং আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৯০জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. আহমদ হাবিবুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশেও যে ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব। আমরা যে অনেক এগিয়েছে এই ইতিবাচক খবরটা সবাইকে জানিয়ে দেয়া উচিত। আশাবাদের জয় হোক।
