দুধ খাওয়ানোর ছলে যেভাবে নবজাতক চুরি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জন্মের ৩ দিন পরও মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছিল না শিশু আব্দুল্লাহ। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি আরেক মা এগিয়ে আসেন তাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য। এতে হাফ ছেড়ে বাঁচেন শিশুটির মা শাহিনা আক্তার।
কিন্তু নুসরাত নামের সেই দুধমা’ই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে চুরি করেন নবজাতক আব্দুল্লাহকে। এ ঘটনায় নুসরাতসহ চারজনকে হেফাজতে নিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এ তথ্য জানান।
এদিকে শিশুটির মা শাহিনা আক্তার বলেন, আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম, আমার বাচ্চা আর ফিরে পাব না। এরপরও সবার চেষ্টায় আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি। এজন্য অনেক অনেক শুকরিয়া। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
৩১ আগস্ট হাসপাতালের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে চুরি হয় নবজাতক আব্দুল্লাহ। চুরির ৩ দিন পর শনিবার রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে নবজাতকটি উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
ডিসি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, বাচ্চাটি (আব্দুল্লাহ) জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে দুধ পাচ্ছিল না। এজন্য হাসপাতালে পাশের বেডে থাকা নুসরাত নামের আরেক মায়ের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছিল। নুসরাতের নবজাতক বাচ্চাটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিল। একপর্যায়ে নুসরাত মনে করে তার বাচ্চাটা হয়তো বাঁচবে না, তাই এ বাচ্চাটি চুরি করবে বলে ফন্দি আঁটে।
ডিসি বলেন, নুসরাতের বাসা থেকেই বাচ্চাটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরাতে দেখেছি নুসরাত এ বাচ্চাটিকে কোলে করে নেমে যাচ্ছে। আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, আজিমপুরের কোনো একটি জায়গাতে গিয়ে বাচ্চাটিকে নুসরাত তার স্বামীর কাছে হস্তান্তর করে। পরে নুসরাত আবার হাসপাতালে তার বেডে এসে শুয়ে পড়ে।
পরে সে আব্দুল্লাহর মা শাহিনাকে বলে, ‘তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন আব্দুল্লাকে তোমার পাশে শুইয়ে দিয়েছিলাম। কারণ, আমার বাচ্চা আইসিইউতে ছিল। সেখানে ডাক্তাররা আমাকে ডেকেছিল।’
এ ঘটনায় বাচ্চাটি উদ্ধার ও নুসরাতের স্বামী নাজমুল হোসেন তুষার, শাশুড়ি নাহার বেগম ও ননদ নাদিরাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিসি।
রোববার সকালে ঢামেক হাসপাতালের ১০৬ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ৬ দিন বয়সি ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছেন শাহিনা আক্তার। তাকে ঘিরে আছেন বেশকিছু নারী-পুরুষ। যাদের কেউ শাহিনা-হিরণ দম্পতির স্বজন, কেউবা অন্যান্য রোগীর স্বজন।
শিশুটির মা শাহিনা আক্তার বলেন, আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ পাশের বেডের ওই নারীর দিকে। আমি নিশ্চিত ছিলাম, ওই মহিলা ছাড়া আমার বাচ্চা কেউ আমার বিছানা থেকে চুরি করতে পারেনি। আমি পুলিশকেও বলেছিলাম, ওকে ধরলেই আমার বাচ্চা পাওয়া যাবে। তবে ৩ দিন গেলেও যখন ওই নারী স্বীকার করছিল না, পুলিশও আমার বাচ্চা উদ্ধার করতে পারছিল না। তখন আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, হয়তো আমার বাচ্চা আর ফিরে পাব না।
শিশুটির বাবা হিরণ মিয়া বলেন, বাচ্চা চুরি হওয়ার পর অনেকে বলেছেন বাচ্চা ফিরে পাব, আবার অনেকে বলেছেন চুরি হলে আর ফেরত পাওয়ার আশা নেই। আমরাও ভেবে নিয়েছিলাম হয়তো সত্যি আর ফেরত পাব না। বাচ্চা ছাড়াই বাসায় চলে যেতে হবে আমাদের।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম জানান, শনিবার রাতে নবজাতকটি উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বাচ্চাটিকে তার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বিস্তারিত জানার পর সবাইকে তা জানানো হবে।
