ফুটপাতের অবৈধ দোকান থেকে কৃষি মার্কেটে আগুন
মোহাম্মদপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা ‘অবৈধ দোকান’ থেকেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে কৃষি মার্কেটের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারের শেষপ্রান্তে ‘হক বেকারি’র সামনে ফুটপাতের কাপড়ের দোকান থেকেই আগুন গোটা মার্কেটে ছড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, কৃষি মার্কেট ও এর আশপাশজুড়ে ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েকশ’ অবৈধ দোকান। এসব দোকানে দেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
আগুন লাগার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মার্কেটের পাশের বাসিন্দা মো. দিপু। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘটনাটি ফেসবুক লাইভে শেয়ার করেন। তাতে দেখা গেছে, মার্কেটের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারের শেষপ্রান্তে ‘হক বেকারি’র পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানে আগুন জ্বলছে। সেখান থেকে ওই দোকানসহ আশপাশের দোকানগুলোতে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
দিপু যুগান্তরকে বলেন, ‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসি। এসে দেখি হক বেকারির সামনে একটি দোকানে আগুন জ্বলছে। তখন রাত ৩টা ৪৪ মিনিট। সঙ্গে সঙ্গেই আমি ফেসবুকে লাইভ করি। আমি আসার প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি আসে। গাড়ি আসতে আসতে মার্কেটের একটি ব্লকের সব দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ পর মুহূর্তের মধ্যেই পুরো মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’
ওই সময় ঘটনাস্থল এবং আশপাশে থাকা কয়েকজন ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হক বেকারির সামনের ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানে একটি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে অবৈধভাবে সংযোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সংযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এরপর সে আগুন সংযোগস্থলের নিচে থাকা শাড়ির দোকানে লেগেছে।
এ ছাড়াও, রাত ১০টায় মার্কেট বন্ধের পর পুরো মার্কেটে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে না। শুধু মার্কেটের গলিগুলোতে আলো জ্বালাতে বাহির থেকে আলাদাভাবে সিঙ্গেল তারে সংযোগ নিয়ে কয়েকটি লাইট জ্বালানো থাকত। ওই সময় আগুন লাগার পর দুই মিনিটের মাথায় বন্ধ থাকা পুরো মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেওয়া হয়েছিল।
কৃষি মার্কেটের ‘গ’ ব্লকের ব্যবসায়ী নাজমুল আলম নান্টু বলেন, আমি রাত ৩টার কিছুক্ষণ আগে মার্কেটে আগুন লাগার খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে এসে দেখি মার্কেটে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। যে যাই বলুক না কেন। মার্কেটে রাত আড়াইটার দিকে আগুন লেগেছে। আমি আসার প্রায় ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি আসে। মার্কেটের দায়িত্বে থাকা নাইট গার্ডরা পালিয়ে গিয়েছিল। পরে তালা ভেঙে আমরা ভেতরে প্রবেশ করি।
আলমগীর হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, রাত ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মার্কেটে বিদ্যুতের মূল সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগত, তাহলে তো আগে বিদ্যুতের অফিস থেকেই আগুন লাগত। কিন্তু বিদ্যুতের মূল সংযোগের জায়গার পাশেই জেনারেটর। সেটি একেবারে অক্ষত আছে।
কৃষি মার্কেটে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, কৃষি মার্কেটের সংযোগটি পাঁচ’শ কেবিএর। পুরো কৃষি মার্কেট এ লাইনের আওতাভুক্ত। এ আগুন বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট বা বৈদ্যুতিক কোনো সংযোগ থেকে লাগার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ, একজন টেকনিক্যাল পারসন হিসেবে বলতে পারি, শর্ট সার্কিট থেকে এত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে না। কারণ, আমাদের সেফটি ডিভাইস আছে। কোনো দোকান বা কোনো লাইনে কোনো ধরনের সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে সেফটি ডিভাইসের মাধ্যমে লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। তাই, আগুন লাগলেও এত দ্রুত পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।