সন্তানদের ওপর হামলার খবরে অসুস্থ মায়ের মৃত্যু
একে সালমান, মোহাম্মদপুর (ঢাকা)
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে। এতে রোগীর স্বজন ও আনসার সদস্যসহ ৪ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় সন্তানদের ওপর নির্যাতনের খবর শুনেই চিকিৎসাধীন মা তানজিনা আক্তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি স্বজনদের। রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন রোগীর মেয়ে মায়া, দুই ছেলে বাঁধন ও নয়ন এবং তার বড় বোন আসমা ও আনসার সদস্য রবিউল ইসলাম।
রোগীর স্বজনরা জানান, শুক্রবার রাতে হৃদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তানজিনা আক্তার (৩৫)। তাকে সিসিউতে নেওয়া হয়। রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্ত নিয়ে রোগীর কাছে যেতে চাইলে আনসার সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করতে তাদের কাছে টাকা দাবি করেন। রোগীর স্বজনরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এক আনসার সদস্য থাপ্পড় দিলে তার সঙ্গে মারামারি হয়। পরে এই আনসার সদস্যের বাঁশির শব্দে বিশ-ত্রিশ আনসার সদস্য জড়ো হয়ে আমাদের মারধর করতে থাকে। এ পর্যায়ে রোগীর ছোট ছেলে বাঁধনকে বাথরুমের ভেতর নিয়ে বেধরক পেটায়।
অন্যদিকে, হৃদরোগ হাসপাতালে থাকা আনসার ইনচার্জ (পিসি) মনির হোসেন দাবি করেন, তার সদস্যরা কাউকে মারধর করেনি বরং আনসার সদস্যকে রোগীর স্বজনার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। ১০-১৫ জন এসে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন তানজিনা আক্তারের স্বজন পরিচয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। পরে আনসার সদস্যরা বাধা দিলে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সিসিইউ’র গেটে থাকা আনসার সদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে আঘাত করলে ওই সদস্যের মাথা ফেটে যায়।
বর্তমানে ওই আনসার সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনা দেখে অন্য আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন। এতে স্বজনরা আরও উত্তেজিত হয়ে হামলা করে। পরে আনসারদের টাকা চাওয়ার নাটক সাজায়।
অপরদিকে আসমা আক্তার অভিযোগ করেন, আমার বোন (তানজিনা আক্তার) তার সন্তানের ওপর মারধরের খবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমরা বোন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার রক্তের দরকার ছিল। কিন্তু রক্ত জোগাড় করে নিয়ে এলেও টাকা না দেওয়ায় আনসার সদস্যরা ভেতরে ঢুকতে দেয়নি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমার বোন মারা গেছে শুনে আমি হাসপাতালে এলে আমাকেও ঢুকতে না দিয়ে উলটো মারধর করে, যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাবেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
তানজিনা অক্তারের মেয়ে মায়া আক্তারও ঘটনার অভিন্ন বিবরণ দেন। বলেন, আমার খালা, আমাকে এবং আমার ভাইকে বেধরক মারধর করেন আনসার সদস্যরা। আমার ছোটভাই ছেলে বাঁধন আনসারদের হামলায় গুরুতর আহত হন। আমাকেও আনসার সদস্যরা বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মারতে মারতে টয়লেটের ভেতর নিয়ে যায়। ২০-২৫ জন আমাকে লাথি, কিল, ঘুসি দিতে থাকে। তাদের সঙ্গে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার ও আয়ারা যোগ দেয়। আমার বোন আমাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাকেও প্রচণ্ড মারধর করা হয়।
এ ঘটনায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মীর জামাল জানান, আমরা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
শেরে বাংলা নগর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উৎপল বড়ুয়া জানান, কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
