বাড্ডা ভূমি অফিস: তহশিলদার আসাদের সীমাহীন দুর্নীতিতে হয়রান সেবাপ্রার্থীরা
কায়েস আহমেদ সেলিম
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৩৮ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর বাড্ডা ভূমি অফিসের তহশিলদার এবং বাংলাদেশ ভূমি কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুস গ্রহণ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসদাচরণের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এসব অভিযোগের প্রতিবাদ করায় ওই কর্মকর্তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা অনেক।
অভিযোগে জানা যায়, বাড্ডা ভূমি অফিসে যোগদান করার পর থেকেই আসাদুজ্জামান সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এখানে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে ঘুস দেওয়ার পরও কাজ হয় না। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতে তাদের নথিপত্র পর্যন্ত গায়েব করে দেওয়া হচ্ছে। জাল দলিলে জমির নামজারি হয়ে যাচ্ছে অন্যের নামে। নামজারি, খারিজ, খাজনা প্রদানসহ অন্যান্য কাজে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঘুস-দুর্নীতির মহোৎসব প্রকাশ্যেই চলছে বাড্ডা ভূমি অফিসে।
এই অফিসে তহশিলদার আসাদের অনিয়মই নিয়ম। সরকার কর্তৃক ভূমি খারিজের ফি এক হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও খাজনার দাখিলার জন্য (ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ) সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু রসিদ দেওয়া হয় সরকারি হিসাবেই। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই কর্মকর্তা। দৌরাত্ম বেড়েছে দালাল সিন্ডিকেটেরও। ১২ জন দালালের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে টাকা নেওয়া হয়। তহশিলদার আসাদ তার লালিত ওমেদার জুয়েল, মোক্তার, নবী, ফারুক, রফিক, কামাল, মর্তুজা, ইসাহাক দেলোয়ারকে একটি রেট নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কেউ নামজারি করতে চাইলে এই রেট অনুযায়ী টাকা দিয়েই করতে হবে। সে অনুযায়ী বাড্ডা মৌজার অধিগ্রহণের অবমুক্ত হওয়া এলএ কেইস জমির নামজারির ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ঘুস নিয়ে থাকে এই ওমেদার দালাল সিন্ডিকেট। আর অধিগ্রহণের বাইরের জমির জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা গুনতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র সঠিক থাকলেও মেলে না নামজারি বা মিউটেশন। আর কাগজপত্রে ত্র“টি থাকলে তিনি পাঁচগুণ টাকাও আদায় করছেন। সামান্য ভুল থাকলেও জমির মালিকদের কাছ থেকে নিজে এবং দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। পরিস্থিতির শিকার হয়ে আসাদের ‘আইন’ মানতে বাধ্য হন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।
কয়েক দিন আগে বাড্ডার দুই সহোদর রফিকুল ইসলাম খোকা ও খাইরুল ইসলাম পৈতৃক সূত্রে এসএ রেকর্ডে নামজারি মূলে আরএস এবং সিটি জরিপে জমির মালিক হয়ে নামজারির আবেদন করেন। এরপর আসাদের লালিত ওমেদার মোক্তার ও জুয়েল সেবাপ্রার্থীর কাছে মুঠোফোনে এক লাখ টাকা নামজারি ফি দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় সরকার কর্তৃক অবমুক্তের সব কাগজ থাকা সত্ত্বেও আবেদনটি বাতিল করে দেন তহশিলদার আসাদ। তবে আসাদের বেঁধে দেওয়া টাকা দিলে নামজারি হয়ে যেত অনায়াসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ভূমি মালিক বলেন, তার দাবিকৃত ঘুষের অর্থ দিতে অস্বীকার করলে নানা টালবাহানা করে জমির মালিকদের হয়রানি করেন আসাদ। আরেক ওমেদার অভিযোগ করেন, বাড্ডা ভূমি অফিসে তহশিলদারের টার্গেট মোতাবেক মাসে নামজারির কাজ এনে না দিলে এখানে কাজ করা যাবে না মর্মে হুমকি দেন আসাদ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়Ñসবকিছু অনলাইনভিত্তিক হলেও জমির পর্চা (খসড়া) তোলাসহ সব কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে বাড্ডা ভূমি অফিসে। নিরীহ ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই ভূমি কর্মকর্তার দুর্নীতি রোধে দুদকের হস্তক্ষেপ জরুরি।
অভিযোগের বিষয়ে তহসিলদার আসাদুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই জানি না। ভূমি অফিস দালাল, ঘুস, দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ।
এ ব্যাপারে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিবলী সাদিক বলেন, আমরা এখনো কোনো ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করব এবং প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
