বকেয়া বেতন দাবি
যমুনামুখী মিছিলে বাধা, কাকরাইলে শ্রমিকদের অবস্থান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বকেয়া বেতনের দাবিতে টিএনজেড পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মার্চ টু যমুনা মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে বাধা পেয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এতে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে কারখানা মালিকের বাড়ি বিক্রি করে পাওনা
পরিশোধ করা হবে জানিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাছে দুই দিন সময় চেয়েছেন শিল্পপুলিশের
ডিআইজি আবুল কালাম সিদ্দিক। রাত আটটায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করে তিনি এ
আশ্বাস দেন। তবে পাওনা আদায়ে সুনির্দষ্টি দিনক্ষণ না দেওয়া পর্যন্ত অবস্থান অব্যাহত
রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শ্রমিকরা। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকরা
কাকরাইলে সড়কে অবস্থান করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায়
টিএনজেড গ্রুপের অন্তত ১৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩৩ হাজার
শ্রমিক। তাদের তিন মাসের বেতন মোট ৫৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে।
ওই পাওনার দাবিতে মঙ্গলবার শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তারা কর্মকর্তাদের
ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন। দুপুর আড়াইটার দিকে শ্রমিকরা শ্রম ভবন থেকে প্রধান উপদেষ্টা
বাসভবন যমুনার দিকে মিছিল শুরু করেন। কাকরাইল মসজিদের কাছে পৌঁছালে পুলিশ কাঁটাতারের
ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ আটকে দেয়। শ্রমিকরা সেখানেই রাস্তায় বসে পড়েন এবং বকেয়া দাবিতে
স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনরত এক শ্রমিক বলেন, আমরা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার
জন্য শ্রম ভবনের সামনে ৯ দিন ধরে বিক্ষোভ করছি। কিন্তু কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে
আসেনি। আমরা ন্যায্য মজুরির দাবিতে এখানে এসেছি। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের দোষ কী?
আমাদের বেতন নিশ্চিত করুন, তাহলে আমরা বাড়ি ফিরে যাব। আরেক শ্রমিক শাহ পরান বলেন, কর্তৃপক্ষ
৭ মের মধ্যে বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কথা রাখেনি। কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ
করলেও কেউ আমাদের দাবি শোনেনি। এ কারণে আমরা যমুনার দিকে যেতে বাধ্য হয়েছি। বেতন না
দেওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না।
শ্রমিক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমার
তিন মাসের বেতন পাওনা। এখনো কোনো টাকা দেয়নি মালিকরা। আমরা পরিবার নিয়ে খুবই খারাপ
অবস্থায় আছি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় রাস্তায় নেমেছি।’
শ্রমিকদের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে কাকরাইলে অবস্থান
নিয়েছেন বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের একজন গণতান্ত্রিক ছাত্র
কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে দুই
মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে হামলা
চালিয়েছে। মিটিংয়ে পাওনা পরিশোধে তারিখ দেওয়া হয়, কিন্তু শ্রমিকরা বেতন পান না। তাদের
পাওনা পরিশোধে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের যে ত্রিপক্ষীয় কমিটি হয়েছে, সেই কমিটি বারবার
সদ্ধিান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। আমরা
কোনো আশ্বাস চাই না। যতক্ষণ শ্রমিকরা তাদের শ্রম-ঘামের পাওনা না পাবে, ততক্ষণ আন্দোলন
চলবে।
ডিএমপির ট্রাফিক রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল
হান্নান খান জানান, শ্রমিকরা সড়কে বসে পড়ায় মত্স্যভবন থেকে কাকরাইলগামী যান চলাচল বাধাগ্রস্ত
হয়। তবে কাকরাইল থেকে মত্স্যভবনগামী যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিন রাত ৮টার দিকে শিল্পপুলিশের ডিআইজি আবুল কালাম
সিদ্দিক কাকরাইলে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শ্রমিকদের তিনি জানান, পটপরিবর্তনের পর
থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিক বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তবে মালিক তার একটি ওয়াশিং প্লান্ট এবং
একটি বাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সম্মত হয়েছেন। সরকারও শ্রমিকদের দাবির
সঙ্গে একমত। দাবি পূরণে কিছুটা সময় লাগবে। মালিকদের থেকে সব পাওনা রাষ্ট্র শ্রমিকদের
বুঝিয়ে দেবে।
এ সময় কলকারখানা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ওমর মো. ইমরুল
মহসিন বলেন, মালিকপক্ষের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই শ্রমিকদের পাওনা
পরিশোধের উদ্যোগ নেবে সরকার।
বকেয়া বেতন-বোনাসের
দাবি আদায়ের শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, টিএনজেড গ্রুপের কাছে শ্রমিকদের
পাওনা ৫৪ কোটি টাকা। গত ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার
কথা থাকলেও ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রতিজন শ্রমিক ৯ হাজার ১০০ টাকা করে পান।
বাকি বেতন, ঈদ বোনাস, নোটিশ পে, সার্ভিস বেনিফিটসহ যাবতীয় পাওনার দাবিতে ১১ মে থেকে
টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা বিজয়নগরে
শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করে আসছেন।
