নদীপথেও গরু আসছে ডেমরায়, দাম বেশি বিক্রি কম
ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর ডেমরায় ৮৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাট ও অস্থায়ী আমুলিয়া মডেল টাউন হাটে গরু উঠেছে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ। লাগাতার বৃষ্টির কারণে গরু এসেছে তুলনামূলক কম। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নদীপথে গরু আসছে বৃষ্টি উপেক্ষা করে।
এবার বৈরী আবহাওয়া ও হাট পর্যন্ত গরু আনার খরচসহ গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুর দাম আগের তুলনায় বেশি। ক্রেতার অভাবে বিক্রি কম হলেও দাম কমাতে রাজি নন ক্রেতারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্থল ও নদীপথে এখনো প্রচুর গরু আসছে ডেমরায়। তবে দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা বিক্রেতারাও কিছুতেই দাম ছাড়তে রাজি নন বলে জানিয়েছেন অনেকে।
তারপরও স্থানীয় ক্রেতাসাধারণ বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরাফেরা করছেন হাটে, দেখছেন বিভিন্ন প্রজাতির রঙ-বেরঙের গরু ও ছাগল। বিক্রেতারা এবার দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি, তবে ক্রেতারাও কম নন, অনেক সময় হাতে থাকায় এখনো বেশি দাম বলতে রাজি নন ক্রেতারা।
এদিকে সোমবার ওই দুটি হাটে ছাগলের পরিমাণ কম দেখা গেছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক পশু যাত্রাপথে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিন্তিত গরু বিক্রেতারা।
এরই মধ্যে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটে গরু চলে এসেছে আড়াই হাজারের বেশি। তবে আমুলিয়া মডেল টাউন অস্থায়ী পশুর হাটেও পশু আসা শুরু হয়েছে গত ৫ দিন ধরেই। এখানেও আড়াই হাজারের বেশি গরু উঠেছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক মো. মাসুম।
তিনি বলেন, এ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভালো দামে বিক্রির আশায় অনেক গরু আসবে ডেমরায়। আর আনুষ্ঠানিকভাবে মডেল টাউন হাটটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। এদিকে সারুলিয়া পশুর হাটে গত শুক্রবার বিকালে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছরও নদী পথে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বেরা, করসালিকা, শাহজাদপুর, ফরিদপুর ও আশপাশের এলাকা থেকে গরু আসছে। নিরাপদে ও কম খরচে স্বাচ্ছন্দে গরু আনা যায় বলে নদী পথেই গরু আনতে পাইকারদের আগ্রহ বেশি। তবে বৃষ্টির কারণে এ বছর ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে।
পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, বনগ্রাম ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেমরায় ট্রাকযোগেও গরু আসছে।
তবে এ বছর ভাড়া ২০ শতাংশ বেশি পড়েছে বলে গরুর দাম বেশি বিক্রি করতে হবে বলে জানিয়েছেন নাটোর থেকে আসা সাজ্জাদ বেপারি। তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দামও আগের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
সরেজমিন দেখা গেছে, সারুলিয়া ও আমুলিয়াা পশুর হাটে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রায় সব ধরনের গরু এসেছে। এখানে নজর কাড়ছে দেশি শাহিওয়াল, ব্রাহামা ও নেপালিসহ ভারতীয় বৈল জাতের বড় বড় গরু। পাশাপাশি ২-৪ দাত ওয়ালা ছোট-মাঝারি গরুও দেখতে অনেকটা সুন্দর।
বড় গরু বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা মণ। ছোট-মাঝারি গরু বিক্রি হচ্ছে ৩৫-২৮ হাজার টাকা মন। ৬/৭ মণ ওজনের গরুগুলো দাম হাঁকাচ্ছেন সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। ৮-৯ মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।
তবে ছোট গরুর দাম ৩৩-৩৫ হাজার টাকা মণ হিসেবে দাম চান এবং খাশির হাটেও দাম বেশি চান বিক্রেতারা। এক্ষেত্রে সাড়ে ১১০০ টাকা কেজি হিসেবে দাম চান বিক্রেতারা।
এদিকে আমুলিয়া মডেল টাউন অস্থায়ী হাটে গরু উঠেছে মাঝারি ও বড় সাইজের। দামের ক্ষেত্রে একইরকম চাচ্ছেন এই হাটের বিক্রেতারাও।
সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদার মো. আমির হোসেন বলেন, এ বছর বৃষ্টির কারণে পাইকারসহ সংশ্লিষ্টরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে হাটে আসার আগপর্যন্ত। তবে একবার হাটে আসতে পারলে আর চিন্তা নেই। তাদের নিরাপদে থাকা খাওয়া ও পশু রাখার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।
সারুলিয়া পশুর হাটে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মো. জোনাব আলী বেপারি বলেন, গত বৃহস্পতিবার আসার পর শুক্রবার গরু রাখার জায়গা পেয়েছেন তিনি। হাটে ৩টি জায়গা পেয়েছেন (ডোগা) তার ছোট-বড় ৯৫টি গরু রাখার জন্য। তবে এখনো কুরবানি দেওয়া ক্রেতার দেখা তেমন না মিললেও ৩টি গরু বিক্রি করেছেন।
তিনি সিরাজগঞ্জ থেকেই ৭-৮ মাস আগে গরুগুলো কিনে মালিকদের বাড়িতেই পালন করেছেন খরচ দিয়ে। সব বিক্রি হলে প্রতি গরুতে ৫-১০ হাজার লাভ হলেই তিনি খুশি।
আমুলিয়া হাটের ইজারাদার চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন রতন বলেন, বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য সব ধরনের সুব্যবস্থা রেখেছি। তবে বৃষ্টির কারণে গরু হাট পর্যন্ত আসতে কষ্ট হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
