হাজারীবাগ হাটে ‘কালাপাহাড়’ ও ‘লাল মিয়া’ ঘিরে ভিড়, হতাশ মালিকরা
হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১০:১৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর হাজারীবাগ কুরবানির হাটে চলছে গরু কেনাবেচার ব্যস্ততা। প্রতিদিন ট্রাকে করে আসছে নানা আকৃতির কুরবানির পশু। এর মাঝেও সবার নজর কাড়ছে দুই বিশালদেহী ষাঁড় ‘কালাপাহাড়’ ও ‘লাল মিয়া’। বিডিআর ৫ নাম্বার গেট সংলগ্ন হাটের ১ নাম্বার গেটের পাশে রাখা গরু দুটি হাটের অন্যতম আকর্ষণ। তবে আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন দুই বেপারী শাজাহান বেপারী ও হুমায়ুন কবির মোল্লা।
শাজাহান বেপারী তার ষাঁড় ‘কালাপাহাড়’কে ৩৭ মাস ধরে সন্তানের মতো করে লালন-পালন করেছেন। দৈর্ঘ্যে সাত হাত, উচ্চতায় পাঁচ ফুটের বেশি এবং ওজনে ২৪ মণ বিশিষ্ট এই বিদেশি জাতের গরুটিকে খাওয়ানো হয়েছে উন্নত খাবার—ভুসি, কুড়া, খেসারি, বুটের ডাল, খেরার ঘাসসহ নানা কিছু। শাজাহানের দাবি, হাটের সবচেয়ে শান্ত ও সুস্থ গরুগুলোর একটি এটি। গরুটির দাম হাঁকছেন ১০ লাখ টাকা।
কিন্তু হাটের বাস্তবতা ভিন্ন। তিন দিন ধরে হাটে অবস্থান করেও মাত্র দুই-একজন ক্রেতা আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাও সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন।
শাজাহান বলেন, এই গরুটা নিয়ে আমরা ৩৭ মাসে অগণিত কষ্ট করেছি। প্রতিদিন গড়ে ৭০০-৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন যদি অন্তত খরচটাই উঠে আসে, সেটাই বড় কথা। লাভ চাচ্ছি না; ৬ লাখ পেলেই দিয়ে দেব।
তিনি আরও বলেন, হাজারীবাগ হাটে বড় গরুর ক্রেতা নেই বললেই চলে। ছোট গরুরই যেন বেশি কদর। দেখছি ৬০ শতাংশ ছোট গরু এর মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অথচ এই রকম গরুর দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। আমরা সত্যিই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।
অন্যদিকে নড়াইল থেকে আসা খামার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির মোল্লা এনেছেন ২৫ মণ ওজনের আরেকটি বিরল ব্রাহামা ক্রস জাতের গরু—‘লাল মিয়া’। লাল বর্ণের গরুটিকে চার বছর ধরে খামারে রেখে বড় করেছেন তিনি। প্রতিদিন খরচ করেছেন ৭০০-৮০০ টাকা করে। বর্তমানে গরুটির দাম চাচ্ছেন সাড়ে ৯ লাখ টাকা। গরুটির দাম এ পর্যন্ত উঠেছে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা। তাই এবারের হাতে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে, অনিশ্চয়তায় ভুগছেন এই ব্যাপারী।
হুমায়ুন বলেন, এ পর্যন্ত মাত্র দুই-চার ক্রেতা এসেছে গরুটি দেখতে। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৬ লাখ ২০ হাজার। আমি এখন বলছি, ৭ লাখ পেলেই ছেড়ে দেব। তারপরও কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
তিনি বলেন, চারদিন ধরে হাটে বসে আছি, কিন্তু গরুটি নিয়ে এক ধরনের হতাশা নিয়ে বসে আছি। বেশি ভিড় শুধু দেখার জন্য, কেনার জন্য নয়। এটা সত্যিই কষ্টের।
দুই ব্যবসায়ীর অভিন্ন অভিমত—হাজারীবাগ হাটে বড় গরুর প্রতি আগ্রহ কম। ক্রেতাদের বেশিরভাগই ছোট গরুর দিকে ঝুঁকছেন। তারা বলছেন, বড় গরু লালন-পালন করতে যেমন পরিশ্রম লাগে, তেমনই অর্থনৈতিক ঝুঁকিও থাকে। হাটে এসে যদি সেই কষ্টের দাম না মেলে, তাহলে ব্যবসা তো মরেই যাবে।
শাজাহান ও হুমায়ুনের মতো আরও অনেক খামারির মুখেও হতাশার সুর। গরুর প্রতি ভালোবাসা, পরিশ্রম, বিনিয়োগ—সব কিছু মিলিয়ে গরুটি যেন শুধু একটি পশু নয়, একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন যদি শেষ পর্যন্ত হাটে বিক্রি না হয়, তাহলে তার চেয়ে বড় বেদনা আর কী হতে পারে!
