Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

শহীদনগর ঘাটে ময়লা দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস

মশার রাজত্বে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

Icon

হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শহীদনগর ঘাটে ময়লা দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস

ছবি : যুগান্তর

লালবাগ থানার পাশে বেড়িবাঁধসংলগ্ন শহীদনগর নৌকাঘাট যেন মশা আর দুর্গন্ধের আখড়া। এক সময় যে খালটি ছিল গোসল ও পানির উৎস, কালের বিবর্তনে তা আজ রূপ নিয়েছে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। আশপাশের এলাকার ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাওয়া খালটি বর্তমানে রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলের মশা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, শহীদনগর ঘাট থেকে কামরাঙ্গীরচরের কুরার ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩৫-৪০টি নৌকা থাকলেও এখন দিনে চলে মাত্র ১৫-২০টি। খালের কালো, দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভাসছে পলিথিন, প্লাস্টিক, বাসাবাড়ির আবর্জনা, মরা প্রাণী ও রাসায়নিক বর্জ্য। সন্ধ্যায় খালের পানিতে গ্যাস জমে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

স্থানীয়দের ভাষায়, মাঝে মধ্যে গ্যাসে আগুন ধরিয়ে ‘মজা’ করে তরুণরা-একটি জীবন্ত প্রমাণ যে, পানি কতটা বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।

শহীদনগর ঘাটের মাঝি মো. আবদুর রহমান বলেন, পানি এত নোংরা যে, যে কেউ দেখলে আঁতকে উঠবে। মনে হয় পুরো খালটাই এখন মশার বাচ্চার ঘর হয়ে গেছে। রোগবালাই ছড়াচ্ছে চারদিকে। এভাবে চলতে থাকলে আর বেশিদিন নৌকা চালানো সম্ভব হবে না। কামরাঙ্গীরচরের মাঝি মো. সুমন বলেন, খালের পানি বিষের মতো হয়ে গেছে। আগে মাছ ধরতাম, এখন কোনো মাছ নেই। নৌকা চালাতে গিয়ে পায়ে পানি লাগলেই চর্মরোগ হয়।

আরেক মাঝি মো. সোহেল জানান, ২০০৫ সালে এক টাকায় মানুষ পার হতো, এখন পাঁচ টাকা দিতেও অনেকেই গড়িমসি করে। কোনোরকমে সংসার চলে। দিনশেষে ৪০০-৫০০ টাকার বেশি ইনকাম হয় না। আগে খালের পানি পরিষ্কার ছিল, পারাপারের সীমানাও অনেক বড় ছিল। এখন একদিকে খাল ভরাট হয়ে গেছে, আরেকদিকে বিষাক্ত ও নোংরা পানিতে ভরে উঠেছে। দুর্গন্ধ, কালো বর্জ্য আর ময়লার কারণে যাত্রী অনেক কমে গেছে। সারাদিন এ খালে থাকতে হয় বলে শরীর খারাপ হয়ে যায়। মশার কামড়ে রক্ষা নেই-কামড় খেতে খেতেই জীবন চলে, তবু সংসার চালাতে হয়।

শহীদনগরের স্থায়ী বাসিন্দা মো. নজরুল বলেন, ২০ বছর আগে এ খালের পানি দিয়ে গোসল করতাম, পানিও খেতাম। এখন হাতে দিলেই চর্মরোগ হয়। এত ময়লা, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। আমরা পুরো এলাকার মানুষ বারবার সিটি করপোরেশন ও জনপ্রতিনিধিদের বলেও এতদিন কোনো লাভ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন, হান্নান ও কুরবান আলী জানান, প্রতিদিন শহীদনগর ঘাট হয়ে কামরাঙ্গীরচরে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মানুষ পার হন। তাদের বেশির ভাগই নিু আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। বিকল্প রাস্তা, বেড়িবাঁধ, লোহার ব্রিজ বা ঢাল দিয়ে গেলে বেশি ভাড়া ও যানজটে পড়তে হয়। অথচ এখন খালের দুর্গন্ধ ও ময়লার কারণে যাত্রীসংখ্যা দিন দিন কমছে। স্কুলগামী শিশুদের চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ গরিব ও অসহায়। খালের পাশে থাকলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ঘর থাকা সত্ত্বে আশপাশের কারখানা ও এলাকার মানুষ প্রতিদিন প্রচুর বর্জ্য ফেলে এ খালে। সেখানে সঙ্গে সঙ্গে বেড়িবাঁধজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ছোট ছোট রিকশার গ্যারেজ, যেগুলো অবৈধভাবে এলাকা দখল করে গড়ে উঠেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজ যুগান্তরকে বলেন, এই ধরনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করি। খালের বেড়িবাঁধ এলাকায় বর্তমানে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে খাল পরিষ্কারের যেসব প্রকল্প রয়েছে, সেগুলো আমরা হাতে নিয়েছি ও কাজগুলো চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে ঈদের ছুটি ও নানা সমস্যার কারণে কিছু কিছু জায়গায় কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। যদি ওই খালটি আমাদের সীমানার মধ্যে পড়ে, তাহলে অবশ্যই আমরা সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করব ও মশার ওষুধ ছিটাবো। এছাড়া আমি আমার ইন্সপেক্টরকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম