|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর মুগদা বাসিন্দাদের ‘দুঃখ’ মুগদা খাল দখলে-দূষণে মৃত প্রায়। বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার সুবিধা থেকে তারা প্রায় বঞ্চিত। নেই পর্যাপ্ত পয়োলাইন, আছে মশার উপদ্রব। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, দখল, দূষণ, এলাকাবাসীর অসচেতনতা, সরকারি-বেসরকারি নানা অবকাঠামো নির্মাণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে মুগদা খাল।
দূষণের ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়। এ খাল থেকে মশা-মাছির উৎপাত ও নানা রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। এ ময়লা-আবর্জনার কারণে শিশুরা পানিতে পড়লে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এ খালে মাঝে মাঝে প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত মুগদা। ওয়ার্ডে রয়েছে দক্ষিণ মুগদা, উত্তর মুগদা, বিশ্বরোড, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম, মানিকনগরের অংশ বিশেষ। মশার উপদ্রব বর্তমানে এলাকার অন্যতম সমস্যা। খাল নামের ওই দূষিত নর্দমা এখন মশার প্রজননক্ষেত্র। আছে অপরিষ্কার নর্দমা। খালটি দখল-দূষিত হয়ে পড়ায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এক সময় খালটি প্রায় ৭০ ফুট চওড়া ছিল। তখন ভারি বৃষ্টি হলেও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা হতো না। বৃষ্টির পানি প্রথমে খালে এবং খাল থেকে যেত বালু নদে। এখন দূষিত নর্দমায় পরিণত হওয়া খাল দিয়ে পানিপ্রবাহের সব পথ বন্ধ। সর্বশেষ কবে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা মনে করতে পারলেন না এলাকাবাসী।
মুগদা খালটি মতিঝিল, বাংলাদেশ ব্যাংক, টিটি-পাড়া, মুগদা, মানিকনগর, মান্ডা, নন্দীপাড়া ও ত্রিমোহনী এলাকা হয়ে বালু নদীতে পড়েছে। বালু নদী থেকে গিয়ে পড়েছে শীতলক্ষ্যায়। বিভিন্ন জায়গায় এই খালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কদমতলী খাল, বাসাবো খাল, জিরানি খাল, নন্দীপাড়া খাল।
সরেজমিন দেখা যায়, ভরাট ও দখলের কবলে বিভিন্ন জায়গা খালের প্রস্থ কমে গেছে। কোথাও কোথাও খালের প্রস্থ ১০ থেকে ১২ ফুটে নেমে এসেছে। কোথাও ময়লা জমতে জমতে ভরাট হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে খালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় খালের বিভিন্ন অংশে শ্যাওলাসহ ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে রাস্তা হয়ে গেছে। নিচে পানির প্রবাহ, উপরে ময়লার স্তুপ পরেছে। খালটিকে একটি ডাস্টবিন মনে হয়। হঠাৎ করে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না এটা একটা খাল। পানিতে বাড়ছে দুর্গন্ধ। বাড়ছে মশা-মাছির উৎপাত। ফলে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
খালের একপাশে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। অপরপাশের বিভিন্ন অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে রিকশা গ্যারেজ, কাঁচাপাকা ঘরসহ নানা স্থাপনা। নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করতে দেখা গেছে। তাছাড়া এলাকাবাসীও অসচেতন। খালের দুই পাশের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন গৃহস্থালির আবর্জনাসহ যাবতীয় পরিত্যক্ত আসবাবপত্র এই খালে নিক্ষেপ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা তারেকুল আলম বলেন, এ খাল শীতলক্ষ্যা নদীতে মিশেছে। এক সময় এ খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করত। দয়াগঞ্জ, জিঞ্জিরা হয়ে বড় বড় নৌকা শীতলক্ষ্যা নদীতে চলে যেত। এ খাল দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মানুষ যাতায়াত করতো, মাছ ধরতো। পানির কলকল শব্দ হতো। সেগুলো এখন বললে মানুষ হাসবে। চোখের সামনে এ খালটা মরে গেলো। এক সময়ের খরস্রোতা মুগদা, মান্ডা খাল এখন শুধুই স্মৃতি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজসেবক হামিদুল হক বলেন, মুগদা খাল এখন মশার হ্যাচারি। মুগদা-মদিনাবাগ দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। মুগদায় এটি মুগদা খাল, মান্ডায় এটি মান্ডা খাল এবং বাসাবোতে এটি বাসাবো খাল নামে পরিচিত। খালটি এলাকাবাসীর গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না, ময়লা-আবর্জনা আর পলিথিন ব্যাগে খাল ভরাট হয়ে মশার হ্যাচারিতে পরিণত হয়েছে। বদ্ধ পানি থেকে এমন বাজে গন্ধ বের হয় যে বমি এসে যায়। নাকে রুমাল না দিয়ে পথ চলা দায়।
খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করেপারেশনের (ডিএসসিসি) প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন, সুখনগর ব্রিজ থেকে এ খাল চারদিকে গেছে। পশ্চিমে-বাসাবো, তিলপাপাড়া, খিলগাঁও। পূর্বে-কদমতলা। উত্তরে-দাসেরকান্দি। দক্ষিণে-মুগদা, মান্ডা, মানিকনগর।
খাল খনন ও পরিষ্কার প্রকল্পের কাজ চলছে। খালের পূর্বদিকে আমিন মোহাম্মদ এলাকা হয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মুগদা খালসহ সব খাল পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রকল্পের ধাপে ধাপে সব কাজ শেষ হলে এলাকাটি দৃষ্টিনন্দন হবে।
