Logo
Logo
×

রাজধানী

উত্তরার সেই হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ!

Icon

উত্তরা পশ্চিম (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৬ এএম

উত্তরার সেই হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ!

রাজধানীর উত্তরার হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আবারও ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 

মৃতের নাম জালাল উদ্দিন সরকার (৫৪)। তিনি কোমরের হাড়ের অপারেশন করাতে গত ২৩ জুন হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের নিউরো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. হোজায়ফা আহমাদের তত্ত্বাবধানে তিনি ভর্তি হন বলে জানা গেছে।

বুধবার (২ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে। স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় জালাল উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বজনরা জানায়, অপারেশনের পরেও জালাল উদ্দিন সরকার কথাবার্তা বলেছিলেন। কিন্তু এক রাত ঘুম না হওয়ায় বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালে চিকিৎসক জালাল উদ্দিনকে ঘুমের ওষুধ পুশ করেন। এরপর আর রোগীর জ্ঞান ফেরেনি। তিন-চার দিন পর বুধবার তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের লেকড্রাইভ সড়কে অবস্থিত হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছে রোগীর আত্মীয়-স্বজন।

এ সময় সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে মৃত জালাল উদ্দিন সরকারের ছেলে সোহাগ সরকার কাঁদতে কাঁদতে যুগান্তর প্রতিনিধিকে জানান, ‘আমার বাবাকে ১ লক্ষ টাকা চুক্তিতে হাড়ের অপারেশন করানোর জন্য এই হাসপাতালে ভর্তি করি। আমার বাবা নিজে পায়ে হেঁটে হাসপাতালে আসছে। অপারেশনের পরও তিনি ভালো ছিলেন। ঘুমের ওষুধ দেওয়ার পর আমার বাবার আর জ্ঞান ফেরেনি। এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে আমার বাবা নাকি মারা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার বাবাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলছে, আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

মৃতের আপন ভাতিজা রুবেল সরকার যুগান্তরকে জানান, ‘আমার চাচা মঙ্গলবারই মারা গেছে। বিষয়টা বুঝতে পেরে আমরা চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকি। কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগী মারা যায়নি। অথচ বুধবার বিকালে বলছে আমার চাচার কিডনী, লিভার আর ফুসফুস নষ্ট হয়ে নাকি আমার চাচা মারা গেছে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে রুবেল বলেন, ‘এই হাসপাতালে এর আগেও ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগী মেরে ফেলার ঘটনা আছে’।

মৃত জালাল উদ্দিনের আরেক স্বজন যুগান্তরকে জানান, ‘আমরা চিকিৎসককে বলছি- আপনি ঘুমের ঔষধ দিয়েছেন কিনা? চিকিৎসক বলেন, ঘুমের ঔষধ দিছে কিনা এটা তার মনে নাই। ভুল চিকিৎসা দিয়ে তারা আমার চাচাকে মেরে ফেলছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসপাতাল ম্যানেজার ওমর ফারুকের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বুধবার রাত ৯টা ৫৩ মিনিটে নিচতলার রিসিপশনে গিয়ে দেখা যায় চেয়ার টেবিল খালি পড়ে আছে। এ সময় দূরে সরে থাকা হাসপাতালের রিসিপশন বিভাগের এক কর্মকর্তা নিজেকে রাজু নাম পরিচয় দিয়ে যুগান্তরকে জানায়, ম্যানেজার স্যার (ওমর ফারুক) ওপরে আইসিইউতে আছে। পরে লিফটের ৫ তলায় আইসিইউর সামনে গিয়ে ম্যানেজার ওমর ফারুকের খোঁজ জানতে চাইলে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীরাও তার খোঁজ দিতে পারেননি। সর্বশেষ রাত সাড়ে ১১টায় ফোনে কল দিলে হাসপাতাল ম্যানেজার ওমর ফারুকের মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আব্দুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা থানায় এসেছেন। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পিত্তথলির অপারেশন করাতে এসে মারা যান শামিমা আক্তার মুন্নি (৩৮) এক নারী। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিযোগের তদন্ত এখনো চলমান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম