ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি) : ১৪ নম্বর ওয়ার্ড
সড়ক যেন ময়লার ভাগাড়
সড়ক ও ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকানপাট
হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি-যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়ক যেন ময়লার ভাগাড়। ওয়ার্ডটিতে আজও গড়ে ওঠেনি কোনো বর্জ্য রাখার ঘর বা এসটিএস। আর এ সুযোগে বাসিন্দা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সড়কেই গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলে রাখেন। এতে মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
এদিকে ভাঙাচোরা সড়ক, চারদিকে আবর্জনার স্তূপে বিরাজমান নোংরা পরিবেশ, বিভিন্ন কারখানা বর্জ্যরে দুর্গন্ধ, অপরিকল্পিত ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত সৃষ্ট জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধযুক্ত ওয়াসার ময়লা পানি, ট্যানারি বর্জ্য, তীব্র গ্যাস সংকট, মশা-মাছির ভয়াবহ উপদ্রব, বেওয়ারিশ কুকুর আতঙ্ক, অকেজো সড়কবাতি ও অভ্যন্তরীণ অপ্রশস্ত সড়ক- সব মিলিয়ে জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এ ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডটিতে বর্তমানে নাগরিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে যেন চরম হুমকির মুখে ফেলেছে।
ওয়ার্ড পরিচিতি: ডিএসসিসির ১৪নং ওয়ার্ড ঢাকার হাজারীবাগ থানাধীন বীরবান কাছড়া, গজমহল রোড, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা, জিগাতলা (তিন মাজার), দক্ষিণ সুলতানগঞ্জ, সোনাতনগড় (মনেশ্বর), জিগাতলা স্টাফ কোয়ার্টার, মনেশ্বর (জিগাতলা), শিকারীটোলা, মনেশ্বর (১-৩৬), তল্লাবাগ ও মিতালী রাস্তার অংশ, চরকঘাটা ও টালী অফিস রোডসহ দক্ষিণ মধুবাজার এলাকা নিয়ে গঠিত। এটি অঞ্চল-৩, আঞ্চলিক কার্যালয় ও সংসদীয় ঢাকা-১০ আসন অন্তর্ভুক্ত এলাকা। ওয়ার্ডটি সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৮ নং ওয়ার্ড ছিল।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কগুলো ভাঙাচোরা ও বেহাল। এ ছাড়া সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় চারদিকের নোংরা পরিবেশে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের গাড়ি ভরে গেলেই বাকি ময়লা রাস্তায় ফেলে যায়। তাই ড্রেন সব সময় বন্ধ হয়ে থাকে। এদিকে হাজারীবাগ বাজার রোড থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল ও খোলা ম্যানহোলসহ কর্দমাক্ত পচা পানিতে ভরা। এতে সড়কটিতে যানজট ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। একই চিত্র দেখা গেছে সোনাতনগড়, বন্ধুমহল ও চরকঘাটা এলাকা, হাজারীবাগ বাজার রোড থেকে বউবাজার, কালুনগর ৩০ ফিট রাস্তা হয়ে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রধান সড়ক ও অলিগলির রাস্তাগুলোতেও খোলা ম্যানহোল, খানাখন্দ ও কর্দমাক্ত পচা পানির কারণে মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়। বউবাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তা অনেক নিচু। বড় বড় ম্যানহোল খোলা পড়ে থাকে, কোনো ঢাকনা নেই। এই সড়কে গাড়ি উল্টে পড়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এসব সড়কে আবার সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাংয়ের আনাগোনা বাড়ে। এ সময় পুরো এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়, যাতে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে না। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ থেকে সিকদার মেডিকেল পর্যন্ত সড়কের পাশে গর্ত থাকার পাশাপাশি অবৈধ যানবাহন পার্কিং ও এ জে আর পার্সেল কোম্পানির পণ্যবাহী গাড়ি পার্কিং করা। এতে এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে টালি অফিস মোড় ও আশপাশের এলাকায় সড়কগুলো ভাঙাচোরা এবং ড্রেনে ময়লা পানি জমে থাকায় পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বাসিন্দারা।
মনেশ্বর থেকে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত ও প্রধান সড়ক অবৈধ দখলে থাকায় পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ স্ট্যান্ড ও ময়লা-আবর্জনায় এখানকার পরিবেশ বিপর্যস্ত। গজমহল, শিকারিটোলা ও টালি অফিস এলাকায় অলিগলি অপ্রশস্ত ও ফুটপাত হকারদের দখলে। এদিকে সন্ধ্যার পর সড়কের বাতি না জ্বলায় পথচারীদের মাঝে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাংয়ের অনুপ্রবেশ বেড়েছে এ এলাকায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওয়ার্ডের দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় যা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়াচ্ছে। বীরবান কাছড়া আবাসিক এলাকায় পরিত্যক্ত জমিতে মাদকসেবী ও বহিরাগত অপরাধীদের আস্তানা তৈরি হয়েছে। সুলতানগঞ্জে ঘনবসতি ও অপ্রশস্ত সড়কের মধ্যে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে হাজারীবাগ তল্লাবাগের একটি সামাজিক সোসাইটি সচেতন থাকায় সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাকি এলাকাগুলোতে এসব সমস্যার কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ।
১৪ নম্বর ওয়ার্ড সচিব সাদ্দাম হোসেন যুগান্তরকে জানান, প্রশাসন বিভাগের আওতাধীন ওয়ার্ড সচিব ও তাদের প্রধান কাজ হলো নাগরিক সেবা প্রদান করা। এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের লাইট ম্যান আসাদ জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে লাইটের মালামালের সংকটের কারণে এলাকার বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাটে লাইট জ্বলে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৩-এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা যুগান্তরকে জানান, তারা প্রতিনিয়ত ময়লা পরিষ্কার করার কাজ করেন ও মশার ওষুধ ছিটান। তবে তিন থেকে চার দিন পর আবার ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যায়। দৈনিক এক থেকে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন পরিষ্কার করা এত লোক দিয়ে করানো সম্ভব নয়। এজন্য এলাকাবাসীকে সচেতন থাকার প্রয়োজন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপারেশনের অঞ্চল-৩ এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সেলিম মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, ৫ আগস্টের আগে-পরে হাজারীবাগ ও বেড়িবাঁধ এলাকায় কিশোর গ্যাং এবং মাদকসেবীদের কিছু ঘাঁটি গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে এসব অপরাধী বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় তৎপর থাকলেও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, সেবী ও গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে।
