স্বেচ্ছাসেবক লীগ-বিএনপি নেতাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা
হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় এক নারীকে অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা ও জোরপূর্বক পুনঃবিবাহে বাধ্য করার অভিযোগে সাবেক স্বামী, সৎভাই ও কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বিএনপি নেতাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী শিফাত সুলতানা মিম (২৭), তিনি এনসিপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমন্বয় কমিটির সদস্য। বুধবার (১৬ জুলাই) কামরাঙ্গীরচর থানায় এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- গত ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের স্মরণে একটি প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই মেলার এ বছরের আয়োজন উপলক্ষে ২০২৫ সালের ৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে মিম প্রধান অতিথি হিসেবে শেখ জামাল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হন। তখনই তাকে অপহরণের ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রদর্শনীর গাড়ির জন্য অপেক্ষার সময় হঠাৎ করে তার সাবেক স্বামী শরিফুল ইসলাম জুয়েল (৩২) ও তার নেতৃত্বে ১০–১৫ জন ব্যক্তি ৫–৬টি মোটরসাইকেলে এসে তাকে ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে মিমের সৎভাই মো. সাইফুল ইসলামসহ (৩৬) আরও তিনটি মোটরসাইকেল এসে তাকে একটি অটোরিকশায় তুলে জোরপূর্বক নিজামবাগের মনির চেয়ারম্যানের বাড়ির ৩য়তলায় সাইফুলের বাসায় নিয়ে যান।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২০-২৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি ও মামলার এজাহারনামীয় বাকি আসামিরা। সেখানেই শরিফুল ও তার বাবা আবুল হাসেম (৬০) এক কাজীকে এনে মিমকে শরিফুলের সঙ্গে পুনঃবিবাহে বাধ্য করতে চাপ দিতে থাকেন; কিন্তু মিম রাজি না হওয়ায় তার হাত-পা বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।
এতে তার বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ভেঙে যায়, বাম চোখ মারাত্মকভাবে জখম হয় এবং শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। পরে মোসা. আমেনা (৫৫) নামের এক নারী একটি বস্তা নিয়ে আসেন এবং তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় কর্মকার ওরফে বাবু মোবাইল ফোনে হত্যার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মিম আরও জানান, তাকে সাদা কাগজ ও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরে এসে দেখেন তার দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে টিপসহির কালি লেগে আছে। পরে ৫ জুলাই তিনি গোপনে বন্ধুদের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে উদ্ধারের অনুরোধ জানান। বন্ধুরা প্রশাসনের সহায়তা চাইলে আসামিরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে মোহাম্মদপুরের একটি অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেয়। ৭ জুলাই সকাল ৯টার দিকে মিম সেখান থেকে পালিয়ে এসে কামরাঙ্গীরচর থানায় আশ্রয় নেন। পুলিশের সহায়তায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
চিকিৎসা শেষে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে জানান তিনি।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- শরিফুল ইসলাম জুয়েল (৩২), মো. সাইফুল ইসলাম (৩৬) (বাদীর সৎভাই), আবুল হাশেম (৬০) (শরিফুলের বাবা), সঞ্জয় কর্মকার ওরফে বাবু ও আমেনা (৫৫)।
এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০–২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি আমিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
