Logo
Logo
×

কর্পোরেট নিউজ

আদর্শ নাকি বিজ্ঞান

পুরোনো সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে নিতে হবে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত

Icon

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম

পুরোনো সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে নিতে হবে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত

অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের আলোচনায় বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের চেয়ে ব্যক্তিগত মত বা আদর্শ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তাই ধূমপান কমাতে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। মূল সমস্যা হলো, ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করতে পারে এমন প্রমাণিত, ধোঁয়াবিহীন নিরাপদ বিকল্পগুলো এখনো গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ বিশ্বজুড়ে গবেষণা বলছে, প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের জন্য এসব আধুনিক ও নিরাপদ বিকল্প খুবই কার্যকর। প্রশ্ন এখন আর এসব পণ্য আছে কি–না তা নয়; বরং বাংলাদেশ কি বিজ্ঞানের পথ অনুসরণ করবে, নাকি পুরোনো ভুল ধারণায় আটকে থাকবে।

বাংলাদেশে এখনো নিকোটিনের প্রভাব নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি রয়ে গেছে। ধূমপানের ক্ষতির মূল কারণ নিকোটিন নয়, বরং সিগারেট পোড়ানোর সময় তৈরি হয় হাজারো বিষাক্ত রাসায়নিক। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর হেলথ ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড ডিসপারিটিস জানায়, নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এনআরটি), যেখানে নিকোটিন ব্যবহৃত হয় তা দশকের পর দশক ধরে নিরাপদভাবে ধূমপান ছাড়ার প্রোগ্রামে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক দেশে নিকোটিনকে এখনো সেই আগের মতোই পুরোপুরি ক্ষতিকর ধরে নেওয়া হয়। এই ভুল ধারণার কারণে অনেক ধূমপায়ী বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষতিকর সিগারেটই চালিয়ে যায়।

বিশ্বের অনেক দেশ এখন তামাক নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানের পথে হাঁটছে। সুইডেন যেখানে বহু বছর ধরে ক্ষতি–হ্রাস নীতির সফল উদাহরণ হিসেবে পরিচিত, সেখানে ২০২৩ সালে ধূমপানের হার নেমে এসেছে ৬ শতাংশের নিচে যা সমগ্র ইউরোপে সর্বনিম্ন। এই সাফল্যের অন্যতম কারণ হলো, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের ধোঁয়াবিহীন, নিরাপদ বিকল্পের সহজপ্রাপ্যতা। নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের আরও কিছু দেশও একই পথ অনুসরণ করছে, কারণ তারা বুঝেছে, ক্ষতি–হ্রাস মানে কোনো ছাড় দেওয়া নয়, বরং এটি বিজ্ঞানসম্মত ও প্রমাণিত বাস্তবতা।

কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ৩ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে। প্রচলিত ধূমপান ছাড়ার পদ্ধতিগুলো এত বড় জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। আরও বড় সমস্যা হলো, এখনো এমন কোনো নিয়ন্ত্রিত বিকল্প নেই যা ধূমপায়ীদের সিগারেট থেকে দূরে যেতে সাহায্য করতে পারে। এর অভাবেই তামাকমুক্ত দেশের লক্ষ্যে পৌঁছানো ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

বৈজ্ঞানিকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ ধোঁয়াবিহীন, নিরাপদ বিকল্প পণ্যগুলো এই শূন্যতা পূরণ করতে পারে। এগুলোতে তামাকপাতা নেই, পোড়ানো লাগে না, ফলে ধোঁয়া বা টারও নেই। সুইডেন ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বিকল্প ব্যবহারকারীদের শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা ধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক কম। 

সমালোচকেরা বলেছেন, নিকোটিনযুক্ত যে কোনো বিকল্প তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারে বা ধূমপানকে ‘স্বাভাবিক’ করে তুলতে পারে। এসব উদ্বেগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা জরুরি, তবে এর সমাধান নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং সঠিক ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। নির্দিষ্ট বয়সসীমা, সতর্কতামূলক প্যাকেজিং, দায়িত্বশীল বিপণননীতি এবং মাননির্ধারণ এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে যে, পণ্যগুলো কেবল প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীরাই ব্যবহার করবেন। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ এভাবেই সফলভাবে ক্ষতি–হ্রাসের নীতি বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশে যেভাবে আদর্শিক প্রতিরোধ দেখা যায় তার বড় কারণ হলো, অনেক মানুষ এখনো মনে করেন ধূমপান ছাড়তে হলে শুধু ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, অসংখ্য দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষতি–হ্রাসের ধারণা নতুন কিছু নয়, সিটবেল্ট ব্যবহার থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা পর্যন্ত, জনস্বাস্থ্যের নানা ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতি সফলভাবে কাজে লাগানো হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণেও একই বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি এখন গ্রহণ করা উচিত।

নিয়ন্ত্রিত, ধোঁয়াবিহীন বিকল্প চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যখাত দুই–ই লাভবান হবে। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় যে বিপুল খরচ হয় তা কমবে, স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপও হ্রাস পাবে। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখী নীতি গ্রহণকারী দেশ হিসেবে এগিয়ে রাখবে।

ডিজিটাল সেবা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাংলাদেশ সবসময়ই নতুন সমাধান গ্রহণে এগিয়ে এসেছে। এখন তামাক নিয়ন্ত্রণেও সেই একই দূরদৃষ্টি প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক প্রমান বলছে, ধোঁয়াবিহীন বিকল্পগুলো সিগারেটের তুলনায় অনেক কম ক্ষতিকর। এই তথ্য উপেক্ষা করলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে না; বরং বিপজ্জনক অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী হয়। যদি সত্যিই জীবনের ঝুঁকি কমানো লক্ষ্য হয়, এবং একইসাথে গবেষণাও প্রমান করে যে, এসব নিরাপদ বিকল্প তামাক ছাড়তে সাহায্য করতে পারে। তাহলে পুরোনো আদর্শের বদলে বিজ্ঞানভিত্তিক পথ বেছে নেওয়াই হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম