ডব্লিউএইচওর ক্ষতিকর নীতির বিরুদ্ধে সিএপিএইচআরএর সতর্কবার্তা: ঝুঁকিতে জীবিকা ও জনস্বাস্থ্য
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বর্তমান নীতিগত অবস্থান সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপেক্ষা করছে এবং একইসঙ্গে এটি বাংলাদেশের মতো দেশগুলো-যেখানে বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল এবং বহুমাত্রিক তাদের অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই প্রেক্ষাপটে এশিয়া প্যাসিফিক টোব্যাকো হার্ম রিডাকশন অ্যাডভোকেটস (সিএপিএইচআরএ) সম্প্রতি একটি কড়া সতর্কবার্তা জারি করেছে।
বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি মানুষ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে, যার মধ্যে প্রচুর সংখ্যক মানুষ জর্দা, গুল, সাদা তামাক ও বিড়ির মতো অনানুষ্ঠানিক ও অপ্রচলিত পণ্য ব্যবহার করে থাকে। এই তামাক খাতের সঙ্গে কৃষক, বিড়ি শ্রমিক, গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবিকা জড়িত।
সিএপিএইচআরএ-এর নির্বাহী সমন্বয়কারী ন্যান্সি লুকাস বলেন, এটা শুধু জনস্বাস্থ্যের ভুল মূল্যায়ন নয় বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর সরাসরি আঘাত।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে যা কার্যকর হতে পারে, তা মেহেরপুর, শেরপুর বা ঠাকুরগাঁওয়ে বাস্তবায়ন করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
এক সময় ডব্লিউএইচও নিজেই প্রতিরোধ, বর্জন ও ক্ষতি হ্রাস—এই তিন স্তরে তামাক নিয়ন্ত্রণের নীতি অনুসরণ করত। তাদের নিজস্ব টোব্যাকো রেগুলেশন গবেষণা গ্রুপ ‘টবরেগ’ এক সময় স্বীকার করেছিল যে, নিরাপদ বিকল্প পণ্য নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার হলে জীবন বাঁচাতে পারে, বিশেষ করে যারা পুরোপুরি তামাক ছাড়তে পারছে না।
কিন্তু সম্প্রতি কিছু আন্তর্জাতিক দাতাদের (যেমন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপি ও গেটস ফাউন্ডেশন) প্রভাবের ফলে ডব্লিউএইচও একরকম নিষেধমুখী নীতিতে ঝুঁকে পড়েছে, যেখানে উদ্ভাবনকে অবজ্ঞা করে নিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে।
সিএপিএইচআরএ বলছে, এটি একটি ভয়াবহ বৈশ্বিক বৈষম্য। জাপান ও সুইডেনের মতো দেশে নিরাপদ বিকল্প পণ্য বৈধ করে ধূমপানের হার নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অথচ একই পণ্য বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার চাপ দেওয়া হচ্ছে!
যদি ডব্লিউএইচও সত্যিই বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সমতার ভিত্তিতে কাজ করত, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এসব ধনী দেশেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করত। বাস্তবতা হলো, সেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে নিষেধাজ্ঞা চালু করা অসম্ভব।
তাহলে বাংলাদেশে কেন এই অসম নীতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? যেখানে বিকল্প কম, বাস্তবায়ন দুরূহ আর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাও দুর্বল। বাংলাদেশে যদি ধূমপানের নিরাপদ বিকল্প না দিয়ে শুধু নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এতে অবৈধ পণ্যের বাজার বাড়বে, সরকার রাজস্ব পাবে না, আর মানুষ আরও বিপদজনক ও অনিয়ন্ত্রিত জিনিসের দিকে চলে যাবে।
আমাদের নিজস্ব নীতির আলোকে দেশে যদি নিরাপদ বিকল্প পণ্যের উৎপাদন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে একদিকে জনস্বাস্থ্য রক্ষা হবে অন্যদিকে বিশ্ববাজারে উদ্ভাবনী পণ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে। কিন্তু ডব্লিউএইচও’র বর্তমান অবস্থান সেই উদ্ভাবনের পথ বন্ধ করছে এবং বাংলাদেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করছে।
ন্যান্সি লুকাস আরও জোর দিয়ে বলেন, এখানে শুধু তামাক নয়, বিষয়টা হলো দেশের সার্বভৌমত্ব, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং মানুষের জীবনের প্রশ্ন। বাংলাদেশকে এখনই জোরালোভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সিএপিএইচআরএ আহ্বান জানাচ্ছে, বাংলাদেশ যেন দাতানির্ভর ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ না করে। বরং বিজ্ঞানসম্মত, ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাস্তবসম্মত নীতিমালা গ্রহণ করে নিরাপদ বিকল্পে জনগণকে প্রবেশাধিকার দেয়। এতে করে একসঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা করবে।
