চবিতে সংঘর্ষ: সায়েম ও মামুনের অবস্থার উন্নতি
প্রশংসায় ভাসছেন নিউরোসার্জন ডা. ইসমাঈল হোসেন
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া দুই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে আরও উন্নতি হয়েছে। স্বাভাবিক হয়েছে তাদের জ্ঞানের মাত্রা।
এর মধ্যে মাথার খুলির একটি অংশ ফ্রিজে রাখা মামুন মিয়া প্রতিদিন নিয়ম মেনে হাঁটাচলা করছেন। এছাড়া মুখে খাবার খাচ্ছেন লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরে আসা ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমও।
গত ৩১ আগস্ট থেকে তারা নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে চবির দুই শিক্ষার্থীকে সুস্থ করে তোলায় প্রশংসায় ভাসছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইসমাঈল হোসেন। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন আহতদের স্বজনরা। ডা. ইসমাঈল শুরু থেকে এই দুই শিক্ষার্থীর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন।
মঙ্গলবার চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের মামুন মিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরেন ডা. ইসমাঈল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইমতিয়াজ আহমেদকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার জ্ঞানের মাত্রা ছিল মাত্র ৪ এবং সে পরিপূর্ণ শকে ছিল। আমরা প্রথমে তিন ব্যাগ রক্ত দিয়ে তাকে স্থিতিশীল করি, এরপর অপারেশনে নিয়ে যাই। অস্ত্রোপচারে দেখা যায়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি দুই ভাগ হয়ে মস্তিষ্কের পর্দা ও একাধিক রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে সেই রক্তনালীগুলো মেরামত করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘টানা ৭ দিন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর সায়েমকে লাইফ সাপোর্ট থেকে বের করা হয়েছে। এখন সে পরিপূর্ণভাবে তার বাবা-মা এবং অন্যদের চিনতে পারছে। মুখে খাবার খাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করতে পারব।’
মামুন মিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ডা. ইসমাঈল বলেন, ভর্তির সময় মামুন মিয়ার অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিল। তার মস্তিষ্কে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, ব্রেইন প্রায় ড্যামেজড ছিল এবং মাথার খুলি অনেকগুলো ছোট ছোট টুকরোতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেই টুকরোগুলো বের করে ফেলি এবং জমাট বাঁধা রক্ত বের করে দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামুনের মস্তিষ্কের ওপর চাপ কমাতে একটি জটিল কিন্তু নিউরোসার্জারিতে প্রচলিত অস্ত্রোপচার করা হয়। মাথার খুলির একটি বড় অংশ খুলে আমরা ফ্রিজে সংরক্ষণ করেছি। এটি চিকিৎসারই একটি অংশ, যাতে ব্রেইনের ওপর চাপ না বাড়ে। এটি নিউরোসার্জারির একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। ২-৩ মাস পর সব ঠিক থাকলে ওই অংশটি আবার প্রতিস্থাপন করা হবে। আপাতত তার নিউরোসার্জারি চিকিৎসা শেষ হয়েছে।’
ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের বাবা মো. আমির হোসেন বলেন, ‘আল্লাহর পর ডাক্তারদের ওপরই আমাদের ভরসা। ডা. ইসমাঈল অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই আমার ছেলের অপারেশন করেছেন। আমি ওনার কাছে কৃতজ্ঞ। ইমতিয়াজের অবস্থা প্রতিদিনই ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।’
মামুনের বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, ‘মামুনের প্রথম অবস্থা দেখে আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। সেই অবস্থা থেকে সে এত দ্রুত রেসপন্স করবে, আমরা কল্পনাও করিনি। এজন্য ডা. ইসমাঈল হোসেন স্যারের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। বর্তমানে মামুনের রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়ায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।’
