সংসদীয় আসন কমানোর প্রতিবাদে
৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনেই অচল মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে জেলাজুড়ে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক হরতাল। দুদিনের টানা হরতাল ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের প্রথম দিনেই অচল হয়ে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলাসহ পুরো বাগেরহাট জেলা।
বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা হরতালের প্রথম দিনে বাগেরহাট থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ ৪৮টি দূরপাল্লার ও আন্তজেলার সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মোংলা বন্দরের সড়ক পথে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহণও বন্ধ রয়েছে।
হরতালকারীরা সকালে জেলা, উপজেলার নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে ঢুকতে পারেননি। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত হরতালে শহরের দোকানপাট, ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হরতাল ও সড়ক অবরোধে জেলার মোরেলগঞ্জে পানগুছি ও মোংলা নদীতে সড়ক বিভাগের ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
হরতালের সমর্থনে সড়ক-মহাসড়কের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে পিকেটাররা টায়ার জ্বালিয়ে কাঠের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করায় মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট জেলা সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সকাল ১১টা) প্রথম দিনের হরতাল চলাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
হরতালের প্রথম দিনে বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, দশানী মোড়, খানজাহান আলী (রহ.) মাজার মোড়, কাটাখালী মোড়, নোয়াপাড়া মোড়, ফরিহাটের বিশ্বরোড মোড়, মোল্লাহাট সেতু মোড়, ফয়লাহাট মোড়, সাইনবোর্ড মোড়, মোরেলগঞ্জ ফেরি এলাকা, রায়েন্দা পাঁচরাস্তা মোড়, মোংলা ইপিজেড-শিল্পাঞ্চল, ফেরিঘাট, মুনিগঞ্জ সেতু ও দড়াটানা সেতু টোল প্লাজা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নির্বাচন অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল থেকে পিকেটিংয়ে তৎপর ছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাড. শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফ্ফর রহমান আলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শেখ কামরুল ইসলাম গোরা, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, নায়েবে আমীর অ্যাড. শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সদস্য সচিব শেখ মুহাম্মদ ইউনুস, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক খাদেম নিয়ামুন নাসির আলাপ, জেলা বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার শেখ জাকির হোসেন, অহিদুল ইসলাম পল্টু, খান মনিরুল ইসলাম, বাগেরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ শাহেদ আলী রবি, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফকির তারিকুল ইসলাম, সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সৈয়দ আসাফুদৌলা জুয়েল, জেলা জামায়াতের যুব বিষয়ক সম্পাদক এস এম মঞ্জুরুল হক রাহাতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।
হরতাল চলাকালে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের একটি সংসদীয় আসন কমিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে। বাগেরহাট একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা—ভৌগোলিক অবস্থা, জনসংখ্যা, মোংলা বন্দর, ইপিজেড-শিল্পাঞ্চল ও দুটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটসহ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় চারটি আসন বহাল রাখা প্রয়োজন। একটি আসন কমে গেলে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, চাকরি ও বিভিন্ন সরকারি সেবায় বাগেরহাটবাসী বঞ্চিত হবে। তাই আপামর বাগেরহাটবাসীর এ দাবি আদায়ে সবাইকে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, বাগেরহাটবাসীর স্বার্থরক্ষার এ আন্দোলন কোনো দলীয় আন্দোলন নয়, এটি জনস্বার্থে আন্দোলন। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে আসন পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল রাখতে হবে। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি রাখার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলো নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন রাখাসহ নিজেদের খসড়া প্রস্তাবে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে আসনের সীমানা নির্ধারণ করে। ইসির এই সিদ্ধান্তে আবারো ফুঁসে ওঠে বাগেরহাটের রাজনৈতিক দলসহ আমজনতা। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি বাগেরহাটে পালিত হবে।
