Logo
Logo
×

শেষ পাতা

২৩ বস্তা গোপন নথি জব্দ

মিলেছে বিদেশে জাবেদের সম্পদ কেনার নানা তথ্য

রয়েছে অগ্রিম বুকিং, কিস্তি পরিশোধ ও বিদেশে বাড়ি ভাড়া আদায়ের কাগজপত্র * মামলা প্রমাণে এসব দলিল সহায়ক হবে-দুদক

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মিলেছে বিদেশে জাবেদের সম্পদ কেনার নানা তথ্য

ছবি: সংগৃহীত

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পারিবারিক গাড়িচালকের কাছ থেকে উদ্ধার করা ২৩ বস্তা নথি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদক কর্মকর্তারা এসব নথি দেখছেন। সোমবার সকাল থেকে দিনভর নথি ঘেঁটে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরসহ অন্তত ৯টি দেশে তার অবৈধ সম্পদ কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। জাবেদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলায় এসব নথি গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসাবে উপস্থাপন করা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণে তা যথেষ্ট হবে বলে দাবি করছেন দুদক কর্মকর্তারা। এদিকে অর্থ পাচার মামলায় জাবেদের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

দুদক ঢাকা কার্যালয়ের উপকমিশনার মশিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, একেকটি বস্তা খুলে নথিপত্র ঘাঁটতেই বের হয়ে আসছে বিভিন্ন সম্পদের হিসাব। যা অবাক হওয়ার মতো। একজন মন্ত্রী কোন পর্যায়ের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হলে বিদেশে এত সম্পদের মালিক হতে পারেন তাই ভাবছেন তারা। ২৩ বস্তা নথিপত্রের মধ্যে বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিভিন্ন দলিল রয়েছে।

সূত্র জানায়, বিদেশে সম্পদ কেনার আগে প্রথম বুকিং দিতে হয়। এ ধরনের বুকিংয়ের বেশ কিছু ডকুমেন্টে (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বায়নানামা) কত টাকা দিয়ে বুকিং দেওয়া হয়েছে, কার কার মাধ্যমে কেনা হয়েছে সেসব ফাইল রয়েছে। এককালীন প্রদান করা টাকার পরিমাণ এবং কিস্তি পরিশোধসংক্রান্ত কাগজপত্রও রয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর স্বাক্ষর সংবলিত বেশকিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা নথিতে কোনো কোনো সম্পদ বা অ্যাপার্টমেন্টের পুরো নথি পাওয়া গেছে। আবার কোনোটির আংশিক নথি পাওয়া গেছে।

বিদেশে থাকা বাড়িভাড়া আদায়ের নথি, বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও কোর্টের আদেশ সম্পর্কিত কাগজপত্রও রয়েছে।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার করা ২৩ বস্তা নথি পর্যালোচনা করে তালিকা করা হচ্ছে-কোন বস্তায় কী কী নথি পাওয়া গেছে, কতটি ফাইল রয়েছে। কোন ফাইলে কী রয়েছে এসব লেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই ও সিঙ্গাপুর, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জাবেদের অবৈধ সম্পদ থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদক কর্মকর্তারা এর আগে এসব নথি পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু কোনো দেশ থেকে এসব চিঠির বিষয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু লুকিয়ে রাখা নথিগুলো উদ্ধার হওয়ায় আলামত হিসাবে তা আদালতে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে এবং এতে মামলার অগ্রগতিও দ্রুত হবে।

রোববার ভোরে জাবেদের স্ত্রীর গাড়িচালক ইলিয়াসের শিকলবাহার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের শঙ্কায় ইলিয়াস আগেই তার বাড়ি থেকে সেসব নথিপত্র সরিয়ে কর্ণফুলীতে তার সহযোগী ওসমান তালুকদারের বাসায় রাখে। দুদকের টিম সেখানে অভিযান চালিয়ে বাড়ির একটি কক্ষের তালা ভেঙে ২৩ বস্তা নথি জব্দ করে।

অর্থ পাচার মামলায় দুই কর্মকর্তার জবানবন্দি : জাবেদের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা আবদুল আজিজ ও উৎপল পাল অর্থ পাচারের অভিযোগ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে তারা এ জবানবন্দি দেন। তারা প্রাথমিকভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এজন্য দায়ী করেন সাবেক মন্ত্রী জাবেদকে।

১৭ সেপ্টেম্বর রাতে আরামিট গ্রুপের দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালকে নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি টিম। এরপর তাদের আদালতের নির্দেশে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সোমবার ছিল রিমান্ডের শেষদিন। রিমান্ড শেষে তারা আদালতে জবানবন্দি দেন।

এ বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় আদালত প্রাঙ্গণে দুদকের আইনজীবী মোকাররম হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, আরামিটের দুই কর্মকর্তা কীভাবে ব্যাংক থেকে ওই টাকা নেওয়া হয়েছে, কীভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে এবং ওই টাকায় কীভাবে সাবেক মন্ত্রীর নামে সম্পদ কেনা হয়েছে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ২৩ বস্তা নথির সঙ্গে আসামিদের জবানবন্দির তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম