প্রবাসীর স্ত্রী ও যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল
কিশোরগঞ্জ ব্যুরো
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পরকীয়ার অভিযোগ এনে প্রবাসীর স্ত্রী ও এক যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় মামলার পর সোমবার দুজনকে গ্রেফতার করেছে কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌর সদরের দঁড়িচরিয়া কোনা গ্রামে বিদ্যুতের একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী (২৮) ও ওয়াহিদ মিয়া (২৯) নামে এক যুবককে পেটাচ্ছেন এলাকায় হবি ডাকাত হিসেবে পরিচিত হাবিবুর রহমান। এ সময় চারপাশে ভিড় করে এ ঘটনা উপভোগ করছিলেন এলাকার কৌতূহলী নারী-পুরুষ।
ভিডিওতে দেখা যায়, হাবিবুর রহমান প্রথমে একটি কঞ্চি দিয়ে দুজনকেই পেটানোর পর পাশ থেকে আরেকজন আরও তিনটি কঞ্চি এগিয়ে দেন। সেগুলো একসঙ্গে করে পেটাতে থাকেন হাবিবুর। এ সময় নির্যাতনের শিকার নারী-পুরুষকে চিৎকার করতে শোনা যায়। অবশ্য এর মধ্যে কেউ কেউ মারতে নিষেধ করার কথাও শোনা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি পৌর সদরের এক যুবকের সঙ্গে প্রায় এক যুগ আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। বিয়ের ৪ বছর পর পরিবারের স্বচ্ছতা ফেরাতে সৌদি আরবে পাড়ি জমান ওই যুবক। এর কয়েক বছর পর থেকে একই উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামের জনৈক ওয়াহিদ মিয়ার সঙ্গে ওই নারীর পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের একশ্রেণির লোকজনের মধ্যে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে গ্রামের লোকজন স্বামীর বাড়ি থেকে তাদের আটক করে। রোববার সকালে বাড়ির সামনে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে তাদের দুই হাত একসঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালান হাবিবুর রহমান ওরফে হবি ডাকাত। এ ঘটনার ভিডিও এক কৌতূহলী দর্শক মোবাইল ফোনে ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ১২ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের ৪ বছর পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যায়। আমার দুজন সন্তান রয়েছে। এদিকে ওয়াহিদ মিয়া আমার শাশুড়িকে ধর্মের মা ডাকেন। এ সুবাদে প্রায় সময়ই তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন। শনিবার রাতে আমাদের বাড়িতে এলে জিজ্ঞেস করি কেন আসছেন? সেই সময় ওয়াহিদ বলেন- একটা সমস্যায় পড়েছি সেজন্য আসছি। পরে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি। পাশের রুমে আমার শাশুড়ি থাকেন। ঘরের অন্য একটি রুমে ওয়াহিদ মিয়া ছিলেন। রাত ৩টার দিকে প্রতিবেশী কয়েকজন মিলে ওয়াহিদ মিয়াকে ধরে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় আমাকেও ঘর থেকে ধরে নিয়ে আসে। দুজন দুই রুমে ছিলাম। তারা পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে তার সঙ্গে আমাকেও অমানুষিক নির্যাতন করে। আমি থানায় মামলা করেছি।
এ বিষয়ে কথা হলে কটিয়াদী মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কেউ অপরাধ করলে তাকে নির্যাতন করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এ ঘটনায় ৬ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেছেন। এদের মধ্যে সোমবার বোরহান ও কুলসুম নামে দুইজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টের নারী ও শিশু আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেনও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
