Logo
Logo
×

সারাদেশ

অধিগ্রহণ জটিলতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বাহুবল অংশে ৬ লেন কাজের ধীরগতি

Icon

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, হবিগঞ্জ

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

অধিগ্রহণ জটিলতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বাহুবল অংশে ৬ লেন কাজের ধীরগতি

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজের হবিগঞ্জের বাহুবল অংশে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

ছোট একটি মন্দির এবং একটি বটগাছ রক্ষায় গো ধরেন জমির মালিক। রাস্তার নকশা পরিবর্তনের দাবি তুলেন তিনি। অথচ নকশা পরিবর্তন করলে ভূমিহীন হয়ে পড়বে অসংখ্য পরিবার। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই সাধারণ মানুষের মাঝে।

অপরদিকে কাজে বিলম্ব হওয়ায় একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, অপরদিকে কাজের ব্যয় বাড়লে সরকারেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্ভুপুর গ্রামের তপন পাল বলেন, একজনের স্বার্থে রাস্তাটি বাঁকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আমরা শুনতে পেরেছি। অথচ রাস্তা বাঁকা হলে এখানে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবে। এছাড়া পূর্বদিকে মানুষের বাড়িঘর। ঘনবসতি। সেদিকে রাস্তা নিলে মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের এখানে রাস্তা অনেক আঁকাবাঁকা। রাস্তাটি যদি পশ্চিমদিকে নেওয়া হয় তবে সেটি সোজা হবে। রাস্তা সোজা হলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। পূর্বদিকে নিলে আরও বাঁকা হবে। আরও দুর্ঘটনা বাড়বে। তাছাড়া পূর্বদিকে আমাদের এলাকার একমাত্র প্রাথমিক স্কুল, ঈদগাহ, মক্তবটিও ভাঙা পড়বে। এতে শিক্ষায় আমরা পিছিয়ে পড়ব। মানুষের বাড়িঘর ভাঙবে। কেউ কেউ মাত্র এক থেকে দেড় শতাংশ জমিতে কোনোরকমে একটি ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। তারা নিঃস্ব হয়ে পড়বেন। তাই সার্বিক স্বার্থে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের করা নকশা অনুযায়ীই করার দাবি জানান তিনি।

মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, আমরা ৫ ভাই মাত্র ৯ শতাংশ জমি। একেকজন মাত্র ২ শতাংশের চেয়েও কম জমি নিয়ে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছি। যদি রাস্তাটি পূর্বদিকে নেওয়া হয় তবে আমাদের বাড়িঘর চলে যাবে। আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ব। এমন আরও অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়বে।

রতন পাল বলেন, যে মন্দিরটি বা বটগাছটি রক্ষা করার জন্য গো ধরা হয়েছে সেটি এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মন্দির নয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে আমাদের আলাদা মন্দির তৈরি করে দেওয়া হবে। অপরদিকে পূর্বপাশে রাস্তা গেলে আমাদের বাড়িঘর থাকবে না। আমাদের যদি বাড়িঘরই না থাকে তাহলে মন্দির দিয়ে আমি কী করব। পরিবার পরিজন নিয়ে তো আমি মন্দিরে বসবাস করতে পারব না। ধর্মীয় উপাসনালয় তো মানুষের জন্য। মানুষ যদি না থাকে, তাহলে মন্দিরে কে পূজা দেবে। আমরা চাই রাস্তাটি সোজা হোক। দুর্ঘটনা হ্রাস পাক। পাশাপাশি মানুষের বাড়িঘর রক্ষা পাক।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল নিয়োজিত প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন কাদের বলেন, মহাসড়কের নকশা করা হয়েছে সার্বিক বিবেচনায়। এখানে পশ্চিম পাশে হাওড় এলাকা। তাই সেদিকে ক্ষতি কম হবে। আর পূর্বদিকে ঘনবসতি সেদিকে অধিগ্রহণ করলে ক্ষতি বেশি হবে। তাছাড়া রাস্তাটি সোজা করতে হলে পশ্চিম দিকেই যেতে হয়। পূর্বদিকে গেলে অধিক পরিমাণ জমি লাগবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই মূলত নকশাটি করা হয়েছে। এখন মূল কাজ হচ্ছে জেলা প্রশাসনের। অধিগ্রহণের জন্য যে টাকা প্রয়োজন তাও ইতোমধ্যেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমাদের প্যাকেজটি হচ্ছে আকিজ ফ্যাক্টরি (মর্দিলং ব্রিজ) থেকে সদরঘাট গেট পর্যন্ত প্যাকেজ। তার মধ্যে আকিজ ফ্যাক্টরি থেকে পুটিজুরির অর্ধেক পর্যন্ত এসে যৌথ জরিপ থেমে আছে প্রায় ৬ মাস ধরে। এ সময়ে আমাদের প্রজেক্ট প্রায় শেষ হয়ে যেত। ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে আমাদের সময় গণনা শুরু হয়েছে। এর ২৭০ দিনের মধ্যে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা; কিন্তু প্রায় ২ বছর হতে চললেও আমরা এখনো জমি পাইনি।

তিনি বলেন, আমাদের কাজটি করার জন্য ২শ লোক দরকার। লোকবল বসিয়ে রেখে বেতন দিচ্ছি, যন্ত্রপাতি এনে ফেলে রেখেছি। শুধুমাত্র জমি না পাওয়ায় আমার কাজ হয়েছে অর্ধেকেরও কম। কন্টাক্ট ভায়োলেশনও হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সড়ক বিভাগের খরচ বাড়বে। কারণ যত দিন যাবে ততই জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সেই জিনিসপত্রের দাম অনুযায়ী আমাদের চুক্তির টাকাও বাড়বে। এটি চুক্তি অনুযায়ীই বলা আছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেন কাজের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ গবেষণার পর রাস্তার নকশা তৈরি করা হয়েছে। চাইলেই সে নকশা পরিবর্তন করা যায় না। বাহুবল উপজেলার কল্যাণপুর মৌজায় একটি মন্দির পড়েছে রাস্তায়। সেটি আমরা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার জন্যও প্রস্তাব দিয়েছি; কিন্তু মন্দিরটি যে বাড়িতে পড়েছে তারা বাধা দেওয়ার কারণে রাস্তাটির কাজ করা যাচ্ছে না। বিগত সরকারের সময় জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ একাধিকবার ওই মন্দিরে গিয়েছেন। তিনি মন্দিরটি না ভাঙতে বলেছিলেন। তাই কাজ হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি লিখিত আকারে জানিয়েছি। জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়ার জন্যও লিখিত দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর পাইনি।

তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। এটি সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসকের এখতিয়ার। আর আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব। জমি বুঝে পাওয়ার আগে কাজ করা সম্ভব নয়।

জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান বলেন, সাসেক প্রকল্পের অধীনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যেটি হচ্ছে সেখানে হবিগঞ্জ অংশে ৮১ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এখানে প্রায় ৩০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ৩০টি এলএ কেসের মাধ্যমে। খুব দ্রুত কাজ হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ৪টি কেস বুঝিয়ে দিয়েছি। পুটিজুরি অংশটি নিয়েও কাজ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা জমি হস্তান্তর করতে পারব আশাকরি। এখন কোনো জটিলতা নেই। সড়ক বিভাগ থেকেই নকশা করা হয়েছে। সে অনুযায়ীই কাজ হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেন কাজের বাহুবল উপজেলার মর্দিলং ব্রিজ থেকে সদরঘাট গেট পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার অংশের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল জেভি। এ অংশের রাস্তা পুরোটাই আঁকাবাঁকা। ফলে এটি অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাও। তাই রাস্তাটি সোজা করে রাস্তার নকশা তৈরি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

কিন্তু বিপত্তি ঘটায় একটি পরিবার। সম্ভুপুরের বাসিন্দা সোহাগ পাল, সমীরঞ্জন পাল গংরা একটি মন্দির ভাঙার অজুহাত দেখিয়ে রাস্তার কাজটি আটকে দেন। তাদের আত্মীয় হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ। তার মাধ্যমেই কাজটি তারা থামিয়ে দেন বলে দাবি স্থানীয়দের। অথচ মহাসড়কের নকশায় বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, মার্কেটসহ অনেক স্থাপনা পড়েছে। সেগুলো যথারীতি স্থানীয় মানুষজনের সহযোগিতায় সরিয়েও নেওয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম