তবুও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি প্রতিবন্ধী গোবিন্দ
জিএম মিজানুর রহমান, পাইকগাছা (খুলনা)
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
১৯৮৯ সাল, গোবিন্দের বয়স তখন ১০-১২ বছর। দুপুর বেলা নারকেল পাড়ার জন্য গাছে উঠার সময় পড়ে যায় মাটিতে। এতে তার দুটি হাত-পা ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে যায়, থেঁতলে যায় মুখমণ্ডল। তার বাঁচার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। রাখে আল্লাহ মারে কে! গোবিন্দ বেঁচে গেছে ঠিকই কিন্তু খণ্ড বিখণ্ড দুটি হাত কোনোমতে নাড়াচাড়া করতে পারে। এই হাত দিয়ে আর কষ্টের কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব না।
তবুও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি প্রতিবন্ধী গোবিন্দ বিশ্বাস (৪২)। তিনি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার পুরাইকাটি গ্ৰামের শক্তিপদ বিশ্বাসের ছেলে; চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট।
গোবিন্দ জানান, তাই বলে তো আর বসে থাকলে চলবে না। জীবনযুদ্ধে তাকে জয়ী হতে হবে। এ দৃঢ় মনোবল নিয়ে মাত্র ১০০ টাকা নিয়ে শুরু করেন বাদাম ভাজা বিক্রি। পাইকগাছার সিনেমা হলের দর্শনার্থীদের কাছে বাদাম বিক্রি করে যা পেত তা থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার পুঁজি। এক সময় সিনেমা হল বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি তার বাদাম বিক্রি। সংসার তো চালাতে হবে।
আদালত প্রাঙ্গণের বটতলায় গোবিন্দ একটা ছোট্ট চৌকিখাট বসান। এরপর আর তাকে পেছন দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি বাদাম বিক্রি করেন। এখন তার ৪শ থেকে ৫শ টাকা লাভ থাকে। এতে তার সংসার ভালোই চলছে।
স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার সুখেই কাটছে। এই রোজগারের টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে লেখাপড়া করিয়ে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই তার এই দুই হাতের করুণ অবস্থা দেখে তার কাছ থেকে বাদাম কিনেন। তবে ছেলের হার্টে ছিদ্র থাকায় তিনি এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, মানুষের ভালোবাসায় আমি ও আমার পরিবার বেঁচে আছি। প্রতিবন্ধী হয়েছি তাতে কী হয়েছে। পরের কাছে হাত পেতে খাওয়া বা অন্যের মুখাপেক্ষী না থেকে কাজ করে ভালো আছি।
পাইকগাছায় বারবার নির্বাচিত আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জিএ সবুর জানালেন, গোবিন্দ একটা সৎ ছেলে। প্রতিবন্ধী হয়েও কারো কাছে করুণা ভিক্ষা না চেয়ে সৎপথে উপার্জন করছেন। তার প্রতি আদালত অঙ্গনের সবার ভালোবাসা রয়েছে।
