শরীয়তপুরে ৬ বছরের সেই শিশুকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরে ছয় বছরের কন্যাশিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। রোববার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়েছে।
রিপোর্টে ধর্ষণের পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্ষণের পর ওই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রোববার সকালে শিশুকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মুখে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সখিপুরবাসী। রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে সখিপুরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজনসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনকারীদের একটাই দাবি- হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
এদিকে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। ডা. আব্দুর রাজ্জাক নামে জনৈক ব্যক্তি ময়নাতদন্তের একটি রির্পোট তার ফেসবুক পেজে আপলোড করে লিখেছেন, ‘শিশুর সঙ্গে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে, যেটা চিন্তারও বাহিরে। অন্যান্য নির্যাতনের আলামতসহ ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। আমি আর বলতে পারছি না। বাকরুদ্ধ!! কান্না ধরে রাখতে পারছি না। এখন প্রশ্ন? আমাদের মেয়ে ৬ বছরের শিশুকে কি রেপ করিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। নাকি রেপ ধামাচাপা দিতে হত্যা করা হয়েছিল? নরপিশাচ একটাকেও আমরা ছাড়ব না।’
সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আজ আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে, মাত্র ৬ বছর বয়সি শিশু যে সহ্য করেছে তা কল্পনারও বাইরে। নির্যাতনের চিহ্ন, ধর্ষণের আলামত- এসব শুনে চোখ থেকে অশ্রু থেমে থাকে না। ছোট্ট এই প্রাণের সঙ্গে যে নরপিশাচের কী ঘৃণ্য অপরাধ হয়েছে, ভাবতেই ভয় লাগে। আমাদের সমাজে এমন অমানবিকতা কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। যারা এরকম অন্যায় করেছে, তাদের একটাকেও ছাড় দেওয়া যাবে না। আমাদের কান্না ও ব্যথা যেন বিচার না হারায়। আমাদের দায়িত্ব শুধু প্রতিবেদন করা নয়, নির্ভীকভাবে ন্যায়বিচারের আওয়াজ তোলা।’
হত্যাকাণ্ডের পর শুরু থেকেই একটি কুচক্রী মহল মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার নানা ফন্দিফিকির এঁকেছিল এবং তাদের ইন্ধনে নিহতের আপন চাচি আয়েশা খাতুনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রধান আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বামী মো. সাজ্জাদুল হক সাহান সরদার ও সন্তানরা।
এ ঘটনায় আয়েশা খাতুনের স্বামী মো. সাজ্জাদুল হক সাহান সরদার বলেন, আজকে শিশুর লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যা দেওয়া হয়েছে তাতে লেখা আছে- ধর্ষণ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, অন্যায়ভাবে আমার স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে ফাঁসানো হয়েছে।
আয়েশা খাতুনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে আকিব সরদার বলেন, আমার বোন হত্যার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে- ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তাই প্রকৃত আসামিদের খুঁজে বের করে ফাঁসির রশিতে ঝুলানোর দাবি করছি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিতু আক্তার বলেন, আমরা শিশুর লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি তাতে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা মামলার তদন্তভার অন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়ার চিন্তা করতেছি।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের দুই দিন পর গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুরের সখিপুরে ছৈয়ালকান্দি গ্রামে ছয় বছরের শিশুর লাশ বাড়ির পাশের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটি স্থানীয় মাদ্রাসার নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী। এর আগে বুধবার থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল।
