Logo
Logo
×

সারাদেশ

৮০ পয়সার ভ্যাকসিন ৩০ টাকা!

Icon

মো. আ. রহমান শিপন, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২১ পিএম

৮০ পয়সার ভ্যাকসিন ৩০ টাকা!

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গবাদিপশুর তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স) প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে সরকার নির্ধারিত ৮০ পয়সার ভ্যাকসিনের দাম আদায় করা হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

নির্ধারিত মূল্যের বাইরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

উপজেলার প্রায় ২ লাখ পশুকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা। এ হিসেবে প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করবেন ভ্যাকসিন কার্যক্রমে জড়িতরা।

খামারিদের অভিযোগ, সম্প্রতি অ্যানথ্রাক্স মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সুযোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মীরা সরকারি দামের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। দুর্যোগের মুহূর্তে সেবা প্রদানের বদলে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

সুন্দরগঞ্জে রোগাক্রান্ত গরুগুলো প্রতিনিয়ত জবাই করা হচ্ছে। এই গরুর মাংস কাটার কারণে প্রায় অর্ধশত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত ১ জন নারী মারা গেছেন। গবাদিপশু মারা গেছে শতাধিক।

এ ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন তৎপর হয়। গবাদিপশুগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন থেকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে। তবে নানা কৌশল ও হয়রানির ভয় দেখিয়ে ৮০ পয়সার ভ্যাকসিনের জন্য ২০-৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সচেতনতামূলক কোনো প্রচার না থাকায় এখনো ৯০ শতাংশ গবাদিপশু ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে।

আড়াই লাখ গবাদিপশুর জন্য মাত্র ২৬ হাজার ৪০০ ভ্যাকসিন বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার গবাদিপশু ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে। বাকি ৪ হাজার ভ্যাকসিন দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। 

ভ্যাকসিন বরাদ্দে খামারিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বামনডাঙ্গার আজহার মিয়া বলেন, আমার ৪টি গরু ও ২টি ছাগল আছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২ জন এসে বললেন, তড়কার ভ্যাকসিন নিন। জিজ্ঞেস করলাম, কত টাকা দিতে হবে। তারা ২০ টাকা দাবি করলেন। কম দিতে বলায় তারা জানালেন, ২০ টাকাই দিতে হবে। অফিসে গেলে আরও বেশি লাগবে, তখন আমাদের খুঁজে পাবেন না। বাধ্য হয়ে ২০ টাকা করে দিয়েছি।

মনমথ গ্রামের ভ্যানচালক মজিবর রহমান বলেন, তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে বলেন- গরুর ভ্যাকসিন নিন। জিজ্ঞেস করি, কত টাকা লাগবে। বলেন ২০ টাকা করে। ১০ টাকা দিতে চাইলে বলেন, না। বাজারে গিয়ে দেখি অনেক গরু। সবাই ২০ টাকা করে দিচ্ছেন। পরে ২০ টাকা দিয়ে একটা গরুর ভ্যাকসিন নিয়েছি।

সোনারায় ইউনিয়নের পূর্ব সোনারায় গ্রামের মো. রফিক মিয়া বলেন, শুনেছি গরুর নতুন একটা রোগ ছড়িয়েছে। আমার বাড়িতে ৫টা গরু আছে। ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যায়, কিভাবে পাব, কিছুই জানি না।

খামারি সেজে ভ্যাকসিনেটর চন্দন কুমার রায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, পশু প্রতি ২০ টাকা নিচ্ছি। এই টাকা অফিসে জমা দিতে হয়।

ভ্যাকসিনের সরকারি মূল্য ৮০ পয়সা হলেও বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসের আনুষঙ্গিক কিছু খরচ আছে, সেগুলো এখান থেকে তুলতে হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আনুষঙ্গিক খরচের জন্য ১০ টাকা নিতে বলা হয়েছে। এর বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ভয় দেখানো হচ্ছে না, বরং টাকা দিতে অক্ষম হলেও ভ্যাকসিন দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস ভ্যাকসিনের মূল্য ৮০ পয়সা বলে স্বীকার করে বলেন, ভ্যাকসিনপ্রতি কত টাকা নেওয়া যাবে, তা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবে। তবে আমি যতটুকু জানি, তারাই ১০ টাকা করে নিচ্ছে। এটা তাদের সিদ্ধান্ত, এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম