কমছে বন্যার পানি, তীব্র আকার ধারণ করেছে তিস্তার ভাঙন
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীতে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুই পাড়ের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এরই মধ্যে লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুরে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় সাড়ে ৩শ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই সড়কটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হলে লালমনিরহাট-স্থল শুল্কস্টেশন বুড়িমারীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হবে যাবে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত দেখা গেছে, উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুরে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় সাড়ে ৩শ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে নদীর তীব্র স্রোত আঘাত করায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে সেতু ও রংপুর–লালমনিরহাট আঞ্চলিক সড়ক ভাঙন হুমকিতে পড়েছে।
তিস্তার পানি কয়েক মাস ধরে কখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার কমে যাচ্ছে- এ কারণে ৯শ মিটার দীর্ঘ সেতু রক্ষা বাঁধটি ভাঙনের মুখে পড়ে। চলতি বছরের গত ১১ আগস্ট থেকে এই ভাঙন শুরু হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ভাঙনের দৈর্ঘ্য দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিন।
প্রথমে ৬০ মিটার অংশ ধসে ৭০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়। সময়মতো সংস্কার না হওয়ায় ধস আরও বৃদ্ধি পায়। ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০০ মিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৩শ মিটারে।
এছাড়া নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডহরা গ্রামের মধ্য চর, বড়াইবাড়ী খেয়াঘাট সংলগ্ন মন্টু মিয়ার বাড়ির সামনে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই ইউনিয়নের মিনা বাজারসংলগ্ন আব্দুল হান্নানসহ কয়েকজনের জমিও ভাঙন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। একই সঙ্গে মিনা বাজার থেকে বড়াইবাড়ী খেয়াঘাট পর্যন্ত নির্মিত বাঁধের মাথা, কাঁচা রাস্তা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাঙনের কারণে।
লক্ষীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ এলাকার কৃষক মুকুল ইসলাম ও মনিরুল কবীর জানান, ধান ঘরে তোলার ঠিক ২০-২৫ দিন আগে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় নেই।
এলজিইডির (স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের) উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুল রহমান জানান, সেতু রক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠিয়েছি। আর্থিক বরাদ্দের অনুমোদন পেলেই দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ হেক্টর আমন ধান, ১ হেক্টর মাসকলাই, ২ হেক্টর বীজবাদাম এবং আধা হেক্টর সবজি খেত ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টির কারণে পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে পানি কমছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি উদ্যোগে সহায়তার কাজ চলছে।
