Logo
Logo
×

সারাদেশ

মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

কার কথা সত্য, শিক্ষিকা নাকি পুলিশের?

Icon

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম

কার কথা সত্য, শিক্ষিকা নাকি পুলিশের?

প্রতীকী ছবি

চুয়াডাঙ্গায় এক গানের শিক্ষিকাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় তার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার তিনটি কক্ষের আসবাব ভেঙে ফেলা হয়। ঘরে চাল-ডাল ছিটিয়ে দেওয়া হয় মাটিতে। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, এটি ছিল রাজনৈতিক প্রভাব দেখানোর এক পরিকল্পিত হামলা। তবে পুলিশ বলছে, আইনি প্রক্রিয়া মেনেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

ওই শিক্ষিকা ও তার পরিবারের অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরীফ তাকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করেছে। পরে পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করিয়েছে। 

ওই শিক্ষিকা দর্শনা গার্লস হাই স্কুল ও পূর্ব রামনগর বিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং সম্প্রতি মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশ শিক্ষিকার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরীফ দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তার বাসার দ্বিতীয় তলায় নিয়ে জোরপূর্বক আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান। আমি বাধা দিলে আমাকে জোর করে ধর্ষণ করেন। আমি প্রতিবাদ ও বিয়ের কথা বললে তিনি হুমকি দিতে থাকেন। এরপর আমি গত ২৩ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা আদালতে মামলা করতে গেলে আদালত চত্বরে প্রভাব খাটিয়ে তার লোকজন দিয়ে আমি ও আমার পরিবারকে ভয় দেখাতে শুরু করেন, প্রাণনাশের হুমকি দিলে আমরা ভয়ে ফিরে আসি। শেষে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় ফাঁসিয়ে দেন।

শিক্ষিকার মা বলেন, শরীফ ক্ষমতার দাপটে আমাদের সর্বনাশ করেছেন। তিনি আমার মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক গড়েন। আমরা মামলা করতে গেলে তার লোকজন আমাদের ওপর হামলার হুমকি দেন। এখন পুলিশের সহায়তায় আমার মেয়েকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

শিক্ষিকার বড় ভাই বলেন, আমার বোন সত্য কথা সামনে আনায় তাকে জেলে যেতে হয়েছে। শরীফ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় পুলিশ তার কথায় তাকে গ্রেফতার করেছে। 

ঘটনার সূত্র অনুযায়ী, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দর্শনা সীমান্ত থেকে আসমা বেগম নামে এক নারীকে তিনটি স্বর্ণের বারসহ বিজিবি আটক করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর বিজিবি বাদী হয়ে আসামি আসমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পলাতক ৪ জন পুরুষসহ ৫ জনের নামে একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ আসামি আসমাকে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ওই শিক্ষিকার নাম উল্লেখ করেন। এর ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে।

তবে শিক্ষিকার পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, পুতুল শিক্ষকতা করেন, কখনোই স্বর্ণ চোরাচালান বা অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী বলেন, ওই তরুণী আমাদের এলাকায় গানের শিক্ষক। আমরা কখনো শুনিনি যে তিনি কোনো অবৈধ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। হঠাৎ করে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় গ্রেফতার, এটা খুবই সন্দেহজনক।

এ বিষয়ে জানতে শরিফুজ্জামান শরীফের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গত সোমবার সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেল ‘ফিফটিন মিনিটস’-এ ৩৩ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। 

প্রকাশিত ভিডিওতে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরীফ ও তার ভাই টরিকের বিরুদ্ধে ও দলীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রকাশ পায়। ঘটনাটি প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শিক্ষিকাকে তার নিজ বক্তব্যে শরিফুজ্জামানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে ধরেন।

ভিডিওটি প্রকাশের মাত্র একদিন পরই মঙ্গলবার সকালে শিক্ষিকার বাড়িতে পুলিশি অভিযান ও স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় গ্রেফতারের ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

এ বিষয়ে দর্শনা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুল বলেন, আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর করেছে। পরে বলেন, ভাঙচুরের অভিযোগ সত্য নয়। পুলিশ আইনগতভাবে তাকে গ্রেফতার করেছে, তাকে গ্রেফতার অভিযান কালে কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি হাসিমুখেই আমাদের পুলিশের গাড়িতে উঠে থানায় এসেছে।

দর্শনা থানার ওসি শহীদ মুহাম্মদ তিতুমীর বলেন, বিজিবির মামলায় আসমা ও পলাতক আসামিসহ ৫ জনের নাম ছিল। পরে  আসমা  আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে পুতুলসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে। শরিফুজ্জামান শরীফের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা আমার জানা নেই।

দামুড়হুদা ও জীবননগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ারুল কবির বলেন, বিজিবির স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় শিক্ষিকা আসামি ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শরিফুজ্জামান শরীফ ও তাকে ঘিরে যে অভিযোগ উঠেছে এটার সঙ্গে পুতুলকে গ্রেফতারের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই দিনই গ্রেফতারের বিষয়টি হয়ত কাকতালীয় ঘটনা। তবে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, আমি এই ঘটনা সম্পর্কে খুব বেশি অবগত নই। যেটুকু শুনেছি, আইন সবার জন্য সমান।যদি কেউ প্রভাব খাটিয়ে কোনো ঘটনা ঘটায়, এই দায়িত্ব তার।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম