নদীগর্ভে বিলীন স্কুল, ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠদান
মো. নুরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দুর্গম চরাঞ্চালের একমাত্র শিক্ষার বাতিঘর মধ্যনগর রুস্তম হাওলাদার এসইএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয় যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। শেষ আশ্রয়টুকুও নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়টিতে নেই ম্যানেজিং কমিটি।
নতুন স্কুল স্থাপনের জন্য চলছে জমি নির্ধারণে কাজ। বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন নিয়ে চলছে জটিলতা। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া স্কুল নিয়ে এলাকায় দুপক্ষের দ্বন্দ্বে নতুন ভবন এবং জমি নির্ধারণে জটিলতা থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে অপরিকল্পিতভাবে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া এলাকায় ২০১১ সালে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় চর মধ্যনগর রুস্তম হাওলাদার এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। এরপর ২০২২ সালে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে মুজিব কেল্লা নামক সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থায়ীভাবে বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এসব সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নদী পারাপারের ভয়ে ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যান না শিক্ষকরা।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ২৩৮টি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মাধ্যমিক সরকারি হয়েছে। এবং ৮টি উচ্চ মাধ্যমিক রয়েছে।
শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে আমাদের স্কুলটি নদীতে ভেঙে গেছে। বর্তমানে আমরা সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ক্লাশ করি। এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রেও যেকোনো মুহূর্তে নদী গর্ভে চলে যাবে। এর মধ্যে স্কুল নিয়ে দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে।
বাঘলি গ্রামের সাঈদ বলেন, স্কুল নদীতে ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আমাদের সন্তানরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। যেখানে বর্তমানে স্কুল চলছে সেই আশ্রয়ণ কেন্দ্র যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যাবে।
সমাজ সেবক এসএম আব্বাস বলেন, উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের মধ্যে চরে রয়েছে ৩টি ওয়ার্ড। এই ৩ ওয়ার্ডে প্রায় ৮ হাজার জনগণ বসবাস করেন। বড় সমস্যা হচ্ছে এই চরাঞ্চালের মানুষের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ২ বছর ধরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অথচ সরকার এখনো এই বিদ্যালয় নির্মাণের ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
চর মধ্যনগর রুস্তম হাওলাদার এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর থেকে মুজিব কেল্লা নামক সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জমি জটিলতার কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ে কোনো কমিটি নেই। আমরা ৬ শিক্ষক বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, ২৩৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে দৌলতপুর উপজেলার চর কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নদীভাঙন হুমকিতে রয়েছে। আর চর মধ্যনগর রুস্তম হাওলাদার এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর থেকে জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জটিলতা চলছে। খুব শিগগিরই জটিলতা নিরসন করে স্থায়ীভাবে বিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন বলেন, স্কুলের নাম পরিবর্তন এবং জমি নির্ধারণ নিয়ে এলাকায় পক্ষে-বিপক্ষে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। অচিরেই এসব জটিলতা নিরসন করে চরের মধ্যবর্তী স্থানে স্কুল স্থাপন করা হবে। বর্তমানে স্কুলে কোনো কমিটি নেই। তবে প্রধান শিক্ষক কমিটি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
