Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিএনপি নেতার হুমকি

‘আপনি কত বড় সাংবাদিক, আমার চোখের সামনে পইড়েন’

Icon

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

‘আপনি কত বড় সাংবাদিক, আমার চোখের সামনে পইড়েন’

‘আপনি কত বড় সাংবাদিক, আমার চোখের সামনে পইড়েন। নড়িয়াতে আমার হাত দিয়া বিএনপির কোনো মামলা হলে আপনি প্রত্যেকটি মামলার আসামি হবেন নিশ্চিত থাকেন। আপনি আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেন?’ ওই হুমকি দেওয়ার একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

চাল বিতরণ সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় এভাবেই এক সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক।

স্থানীয়, ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও থানা সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দ বাংলাবাজার এলাকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর। সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর্মসূচির চাল বিতরণে নানা অনিয়ম এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান সরেজমিন অভিযোগের সত্যতা পেলে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি দেন।

এদিকে নড়িয়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মতিউর রহমানের গুদামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কম পেয়ে তাকে জরিমানা করেন এবং অন্যদিকে বিভিন্ন অনিয়ম প্রমাণিত হলে এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মতিউর রহমানের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ বাতিল করে খাদ্য অধিদপ্তর।

এদিকে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরের দাবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খান গত ৬ অক্টোবর পাঁচ লাখ টাকা ঘুস চাওয়া ও ২ লাখ টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগ এনে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি অভিযোগ করেন। আর এসব ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের শরীয়তপুর প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয় সংবাদ প্রকাশ করেন। এরপরই ক্ষুব্ধ হন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগর।

তিনি মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিক আশিকুর রহমানের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। ওই হুমকি দেওয়ার একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয়।

তিনি বলেন, মতিউর রহমান সাগরের প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি ঘটনা দুটি পর্যালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ করায় আমাকে মোবাইল ফোনে হুমকি ধমকি দিয়েছেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগর। তিনি আমাকে সামনে পেলে দেখে নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি থানায় জিডি করেছি। প্রশাসনের কাছে আমার নিরাপত্তা চাই।

এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, আমি সাংবাদিক হিসেবে কাউকে কোনো হুমকি দিইনি। গালিগালাজও করিনি। আশিকুর রহমান যাত্রাবাড়ীতে ছাত্রলীগ করত। সে এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা লেখালেখি করছে। তাই তাকে ফোন করে এসব না করার জন্য বলেছি। সে কোনো সাংবাদিক নয়, সে ছাত্রলীগ নেতা।

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান বলেন, এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জিডি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, মতিউর রহমান নামের এক ব্যক্তির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে নানা অনিয়মের সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তার ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। জানতে পেরেছি তিনি আমার বিরুদ্ধে ঘুস গ্রহণের একটি অভিযোগ করেছেন। যদি বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে এ অভিযোগ করা হয়, তাহলে তারা তদন্ত করে দেখবেন। আশা করি আপনারাও তখন জানতে পারবেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম