Logo
Logo
×

সারাদেশ

মুরাদনগরে প্রশাসন চলছে ফ্যাসিবাদের ইশারায়

গণ–অভ্যুত্থানের পর এখনো বহাল তবিয়তে আ.লীগ, নেপথ্যে কারা?

Icon

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম

গণ–অভ্যুত্থানের পর এখনো বহাল তবিয়তে আ.লীগ, নেপথ্যে কারা?

মুরাদনগরে ২২ ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আ.লীগের দুর্গ অক্ষত রয়েছে। তারা আ.লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলায় দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী তাদের শেল্টারে রয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে পর্যায়ক্রমে তারা তাদের অবস্থান শক্ত করেছেন। তাদের ইশারায় এখনো চলছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে দিন যত যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট ওই জনপ্রতিনিধিরা আরও বেপরোয়া হচ্ছেন। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার ২২ ইউনিয়নে আ.লীগের দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা। দলীয় সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতেন এসব প্রভাবশালী চেয়ারম্যান। অর্থাৎ, উপজেলার ২২ ইউনিয়নে আ.লীগকে শক্তিশালী করা এবং গ্রাম পর্যায়ে আ.লীগের দুর্গ গড়ে তোলার জন্য তাদের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। ৫ আগস্ট আ.লীগ সরকারের পতনের পর এসব ইউপি চেয়ারম্যান খেই হারিয়ে ফেলেন। সেসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সহায়তায় তারা জনরোষ থেকে রক্ষা পান। সুসম্পর্ক বজায় রেখে মামলা, হামলা এবং তাদের গদি রক্ষা করেন। 

সম্প্রতি তাদের হাত ধরে দলীয় শত শত নেতাকর্মী এলাকায় অবস্থান করছেন। কৌশলে সংগঠিত হচ্ছেন তারা। দলের হাইকমান্ড থেকে কোনো নির্দেশনা পেলে দলীয় যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করতে সক্ষম এসব চেয়ারম্যান। উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের ওরফে ভিপি খায়ের উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তাকে ওই ইউনিয়ন আ.লীগের স্তম্ভ বলা হয়। তার নেতৃত্বে সেখানে আ.লীগ নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। 

এছাড়া নবীপুর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেন উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এই ভিপি আ.লীগের ১৬ বছর ব্যাপক সুবিধা পেয়েছেন। দলীয় ব্যানারে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ওই ইউনিয়ন পরিষদ এখন আ.লীগের দলীয় কার্যালয় হিসাবেই পরিচালিত হয়। উপজেলা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী তুফরিজ এটন আ.লীগের শীর্ষ দোসর। উপজেলা পর্যায়ে আ.লীগের সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন তিনি। দলীয় সরকার পতন হলেও জনপ্রতিনিধির ব্যানারে আ.লীগকে তিনি টিকিয়ে রেখেছেন এখানে।

জাহাপুর ইউনিয়নে আ.লীগের সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা পালন করতেন ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ সওকত আহমেদ। সাবেক সংসদ-সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত ওই চেয়ারম্যান ৫ আগস্টের পর সুর পালটে কৌশলে এগোচ্ছেন। স্থানীয়রা তাকে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের হোতা হিসাবে দেখছেন। ধামঘর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদের সাবেক এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের পিএস হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ৫ আগস্ট থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন খন্দকার উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। বাঙ্গরা পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন ওই ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। জাকির সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত। পাশের বাঙ্গরা পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান বাহার খান আ.লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত এ চেয়ারম্যান এলাকায় আ.লীগকে ব্যাপকভাবে সংগঠিত করেছেন। 

এখনো তাকে ঘিরেই ওই এলাকায় আ.লীগ সুসংগঠিত রয়েছে। আ.লীগের যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান এলাকাবাসী। চাপিতলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু মূসা আল কবির সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের আস্থাভাজন। এ চেয়ারম্যান আ.লীগের ডোনার হিসাবে পরিচিত। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্র সমন্বয়কের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। টনকি ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়বুর রহমান তুহিন সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ঘনিষ্ঠজন, আ.লীগের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন তিনি। 

যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের আপন ভাগিনা। উপজেলা আ.লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। পূর্ব ধৈইর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান শুকলাল দেবনাথ উপজেলা আ.লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তিনি ওই ইউনিয়ন আ.লীগকে দলের দুর্দিনেও আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। পাশের পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম দলটির একনিষ্ঠ একজন কর্মী। তাকে ঘিরে ওই ইউনিয়নে আ.লীগ সংগঠিত রয়েছে। নিজ কার্যালয়ে গোপনে চালান দলের কার্যক্রম। কামাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার খান আ.লীগের সক্রিয় কর্মী হিসাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। আন্দিকোট ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদের ছোট ভাই। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। 

আকাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ নিজ ইউনিয়নে ট্রিপল মার্ডার মামলার প্রধান আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন। ছালিয়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুসা সরকার আ.লীগের সক্রিয় কর্মী হিসাবে এলাকায় দলকে পুনর্বাসন করার দায়িত্বে কাজ করছেন। পাহাড়পুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামাদ মাঝি সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের বিশ্বস্তজন হিসাবে পরিচিত। দলীয় পদেও রয়েছেন তিনি। আ.লীগের দুর্গ এখনো অক্ষত রেখেছেন এ চেয়ারম্যান। বাবুটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আরমান হোসেন সাবেক এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিশ্বস্ত হাতিয়ার হিসাবে পরিচিত। তিনি ছাত্রলীগকে সংঘটিত করে ওই ইউনিয়নে আ.লীগের দুর্গ গড়ে তুলেছেন। একইভাবে উপজেলার অন্য ইউপি চেয়ারম্যানরাও ফ্যাসিবাদীর পুনর্বাসন কাজ করছেন বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় ২২টি ইউনিয়নে আ.লীগের ইউপি চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে কিছু পলাতক রয়েছেন। এসব জনপ্রতিনিধি সবাই ফ্যাসিবাদের দোসর। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানরা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম