জাল জামিননামায় মুক্তি পাওয়া আসামিসহ কারারক্ষী রিমান্ডে
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে আদালতের স্বাক্ষর জাল করে সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে মুক্ত করার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ভুয়া জামিননামা ব্যবহার করে আরিফুল ইসলাম (৩২) নামের ওই আসামি জেল থেকে বের হন।
এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কারারক্ষী নাজিমুল ইসলামসহ দুজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারারক্ষী নাজিমুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আরিফুলকে ফের গ্রেফতার করা হয়।
রোববার আদালত মূল আসামি আরিফুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শুক্রবার থেকে কারারক্ষী নাজিমুল ইসলামও পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পলাতক আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৬ অক্টোবর ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। পরে ৯ অক্টোবর পার্বতীপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আদালতে হাজিরের পর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
সূত্র জানায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলা কারাগারে এই ঘটনা ঘটে। পার্বতীপুর পৌর এলাকার অ্যামেরিকান ক্যাম্পের বাসিন্দা আরিফুল ইসলামকে তিন মাস আগে মাদক বিক্রির দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন।
কারাগারে থাকা অবস্থায় আরিফুল আইনজীবী নিয়োগ করলেও জামিন না হওয়ায় বিকল্প পথে বের হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। একপর্যায়ে কারারক্ষী নাজিমুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে জাল জামিননামা তৈরির চুক্তি করেন। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর সেই ভুয়া কাগজের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তি পান আরিফুল ইসলাম।
পরে আদালতে বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে আইনজীবী জানতে পারেন, জামিনের কোনো আদেশই আদালত থেকে হয়নি। তখনই পুরো ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।
ঘটনার পর দিনাজপুর জেলা কারাগারে তোলপাড় শুরু হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে—কারারক্ষী নাজিমুল ইসলামই ভুয়া নথি ব্যবহার করে আরিফুলের মুক্তিতে সহায়তা করেছিলেন।
এ ঘটনায় কারারক্ষী নাজিমুল ইসলামকে একইদিন রাতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার হেফাজতে আছেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
দিনাজপুরের জেল সুপার মতিয়ার রহমান বলেন, অভিযুক্ত কারারক্ষীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে পার্বতীপুর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে গত ৯ অক্টোবর গ্রেফতার হন আরিফুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জাল জামিননামার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানায় পুলিশ।
