শাহজাদপুরে ৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাশ করেনি
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এ বছর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ২টি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও ১টি মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী পাশ করতে পারেনি।
শতভাগ ফেল করা কলেজগুলো হলো- সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের নুকালী ড. মোজাহারুল ইসলাম মডেল কলেজ ও খুকনী মাল্টিলেটার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের বাঘাবাড়ি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা।
এর মধ্যে নুকালী ড. মোজাহারুল ইসলাম মডেল কলেজ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে। খুকনী মাল্টিলেটার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২২ জন ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের বাঘাবাড়ি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ঠিকমত শিক্ষকরা কলেজে আসে না। ফলে ক্লাসও হয় না। অথচ মাস শেষে বেতন নেয়। পরীক্ষার সময় ফরম ফিলাপে ২-৩ গুণ বেশি টাকা নেয়। অধিকাংশ কলে শিক্ষক নেই। তারপরেও বছরের পর বছর কলেজ চলছে। ছাত্র ভর্তি করে শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করছে। নিজেরা ঠিকই ক্লাশ না করে বা কলেজে উপস্থিত না থেকেও বেতন নিচ্ছে। ফলে কলেজগুলোতে পড়ালেখা করার পরিবেশ নেই। শিক্ষক সংকট ও প্রাইভেটনির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে এই ভরাডুবি ঘটেছে।
এ বিষয়ে নুকালী ড. মোজাহারুল ইসলাম মডেল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, গত ২০ মাস হলো কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজ করেন। শিক্ষার্থীরাই ঠিকমতো ক্লাশে আসে না। ইংরেজি বিষয়ে প্রশ্ন হার্ড হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেছে।
এ বিষয়ে খুকনী মাল্টিলেটার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের এখানে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এছাড়া যেসব ছাত্র কোথাও ভর্তির সুযোগ পায় না সেসব কম মেধাবী শিক্ষার্থী ও হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়। তারা বেশির ভাগ গার্মেন্টস বা অন্য কোথাও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে ঠিকমতো ক্লাশ করে না। শুধু পরীক্ষার সময় এসে পরীক্ষা দেয়। ফলে তারা ফেল করে।
এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সুপার ওবায়েদ মোহাম্মদ সিদ্দিকী মোবাইল ফোনে বলেন, আমি এখন মাদ্রাসায় নেই। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাদত হোসেন বলেন, ইংরেজির প্রশ্ন হার্ড হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক সংকট ও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাশ না করাও এর কারণ বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষ ও সুপারের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোজিনা আক্তার বলেন, এই ফলাফল অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা ইতোমধ্যে এ সব প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের ডেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক সংকট, অনিয়মিত ক্লাশ ও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার অভাবকে প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাবেক অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এই ফল শুধু কিছু প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো জেলার শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সতর্কবার্তা। কলেজপর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, প্রশাসনিক নজরদারির অভাব ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনীহাগুলোই এখন বড় সংকট। দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জেলার প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে মূলধারার শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়বে।
