হাসপাতালে পুত্রসন্তান পাল্টে কন্যাসন্তান দেওয়ার অভিযোগে মামলা
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রামের পটিয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া পুত্রসন্তান পাল্টে কন্যাসন্তান দেওয়ার অভিযোগে পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ কাঞ্চননগর ডাক্তার চিত্তরঞ্জন শীলের বাড়ির বাসিন্দা দিলীপ শীলের পুত্র সুমন শীল এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় হাসপাতালের মাসি কাকলি (৪০), নার্স থিম চাকমা (২৫), ডা. নওসীন ও ওয়ার্ড বয় চন্দনকে (২৫) আসামি করা হয়েছে।
বাদীর কাছে হস্তান্তর করা কন্যাশিশুর প্রকৃত পিতৃত্ব নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের কাছে আদেশ চেয়েছেন বাদী।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহীনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তাররাহুম আহমেদ মামলা কেন নেওয়া হয়নি- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতকে জানাতে পটিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওসির বক্তব্য পাওয়ার পর পাশাপাশি সোমবার নতুন করে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওই ঘটনায় পটিয়াজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, পটিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মুখে একটি বেসরকারি হসপিটালে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে ভর্তি করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর ভোররাত ৬টায় তার একটি পুত্রসন্তান জন্ম হয়। এর আগে ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে বাদীর স্ত্রীকে কেবিন থেকে ডেলিভারির জন্য লেবার রুমে নেওয়ার সময় বাদী ও তার স্ত্রী তাদের পক্ষ থেকে দাদি বা যেকোনো একজন নারী অভিভাবক হিসেবে সঙ্গে নেওয়ার অনুরোধ করেন; কিন্তু আসামিরা তাতে কর্ণপাত না করে নার্সরা তাদের সঙ্গে রুঢ় আচরণ করেন। ওখানে লেবার রুমের মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক পুরুষ আগে থেকেই অবস্থান নিতে দেখেন।
ভোর ৬টার দিকে নরমাল ডেলিভারিতে একটি ছেলেসন্তান জন্ম হয়। সেই সময় বাদীর স্ত্রী সজাগ ছিলেন এবং বেশ স্বাস্থ্যবান ও ফর্সা ছেলে সন্তান জন্ম নেওয়ার বিষয়টি দেখতে পান। বাদীর স্ত্রীর সন্তানের জন্মের পর নবজাতককে তার বুকে দেওয়ার জন্য উল্লেখিত আসামিদের অনুরোধ করলেও আসামিরা তাকে চুপ থাকতে বলেন।
মাকে নবজাতকের মুখ না দেখিয়ে মাস্ক পরা অজ্ঞাতনামা পুরুষের হাতে নবজাতককে তুলে দেন। শিশুর জন্মের এক ঘণ্টা পর সকাল ৭টার পর বাদীকে ওয়েটিং রুম থেকে ডেকে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার কথা জানান।
এ সময় বাদী ওই সন্তানের মুখ দেখার পর তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে স্ত্রী পুত্রসন্তান জন্ম নেওয়ার কথা জানান। স্ত্রী বাদীকে জানান, ওই সন্তান ফর্সা ও সুঠাম দেহের অধিকারী ছিল। বিষয়টি জানার পর বাদী হাসপাতালে ওই সময় কর্মরতদের চ্যালেঞ্জ করেন এবং তাদের হাতে দেওয়া কন্যাশিশুর ওজন পরিমাপ করে দেখেন ওজন ২ কেজি ৫শ গ্রাম। কিন্তু বাদীর স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন সর্বশেষ সন্তান জন্মদানের ১৬ ঘণ্টা আগে করানো আল্ট্রাসনোগ্রাফির প্রতিবেদনে জানানো হয় ওই শিশুর ওজন ৩ কেজি ১শ গ্রাম।
এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেয়ে বাদী পটিয়া থানায় গেলে কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। পরে রোববার পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বাদী তার স্ত্রীর সন্তান প্রসবকালের আগে ও পরে হাসপাতালের সিসিটিভির রেকর্ড, ঘটনার কয়েক দিন আগ থেকে জন্ম নেওয়া সব নবজাতকের নথি জব্দ এবং বাদীর হাতে দেওয়া কন্যাসন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা নির্দেশ প্রার্থনা করেন।
মামলার বাদী সুমন শীল জানান, তিনি ওই ঘটনার পর প্রথমে ৯ সেপ্টেম্বর ও পরে ১৬ অক্টোবর দুই দফায় থানায় অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ডিউটি অফিসার তা গ্রহণ করেননি। পরে ওসিকে জানানো হলে তিনি আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর ঘটনায় ওসি কেন ব্যবস্থা নিলেন না তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ওসির বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
