নোয়াখালী সদরে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষ, আহত ৫৫
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নোয়াখালী সদরে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার উপজেলার নেওয়াজপুর ইউনিয়নের কাশেম বাজার এবং আশপাশের এলাকার এ সংঘর্ষে অন্তত ৫৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নোয়াখালী জেলা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, কাসেম বাজার জামে মসজিদে শনিবার ছাত্রশিবির দারসুল কুরআন প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল। সেখানে কিছু যুবদল নেতার নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এ হামলার প্রতিবাদে রোববার আসরের নামাজের পর আবারও একই মসজিদে কুরআন তালিমের কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রশিবির। নামাজের পর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মসজিদে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। পরে মসজিদে তালা মেরে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে আমাদের ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের আনতে অ্যাম্বুলেন্স গেলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে নোয়াখালী শহর শিবিরের অফিস সম্পাদক তানভীর সিয়াম, আইন সম্পাদক নাঈম হোসেন, শিবিরের সাথি ছালাউদ্দিন, কেরামতিয়া মাদ্রাসার ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত আলীসহ ১৬ জন গুরুতর আহত হন।
এদিকে স্থানীয় একাধিক বিএনপির নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেন, আসরের নামাজের পর শিবিরের নেতাকর্মীরা মসজিদের ভেতর জামায়াত-শিবিরের ব্যানার টানিয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এতে মুসল্লিরা বাধা দেন। এরপর শিবিরকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালালে বিএনপির নেতাকর্মীরা বয়োজ্যেষ্ঠ মুসল্লিদের বাঁচাতে যান। এ সময় তারা উলটো বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে নেওয়াজপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৫ নেতাকর্মী এবং ৫/৬ জন মুসল্লি আহত হন। তাদের মধ্যে নেওয়াজপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. আক্তার, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমানসহ ৮ জন নেতাকর্মীকে মুমূর্ষু অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের পর কাশেম বাজারসহ আশপাশের এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। দুদলের সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান জানান, কিছুদিন ধরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মসজিদের ভেতর নামাজের পর ব্যানার টানিয়ে মুসল্লিদের আটকে দলীয় সভা করছেন এবং মসজিদের ভেতর দলীয় স্লোগান দিচ্ছেন। এতে মুসল্লিরা আপত্তি করলে তাদের সঙ্গে তারা খারাপ ব্যবহার এমনকি মারধরও করছেন। এ নিয়ে গত সপ্তাহে কবির হাট উপজেলায় মুসল্লিদের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া জানান, মসজিদে ব্যানার টাঙিয়ে দলীয় স্লোগান দিলে মুসল্লিরা বাধা দেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীও ছিলেন। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে জামায়াত কর্মীরা মুসল্লি ও বিএনপির কর্মীদের ওপর হামলা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর এলাকাবাসী ও জামায়াতের সংঘর্ষে বিএনপির ১০/১২ জনসহ ৬০/৬৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় তারা বাজারে ও এলাকায় লুটপাট চালায়। তিনি আরও বলেন, তারা জেলার প্রতিটি মসজিদে এখন দলীয় কর্মকাণ্ড চালান।
এদিকে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ডা. বোরহানউদ্দিন জানান, জামায়াতের আহতের সংখ্যা ২০/২৫ জন। তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হামলাকারীরা জামায়াতের অনেক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং ৫টি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এখনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে টহল দিচ্ছে।
