রাতে দলবেঁধে ইলিশ শিকার, ভোরে মেঘনার পাড়ে বিক্রি
তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনায় ইলিশ শিকার ও বেচাকেনায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে দিনে তৎপর থাকে প্রশাসন।
আর রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে অরক্ষিত হয়ে পড়ে মেঘনা নদী। জেগে ওঠেন জেলেরা। দলবেঁধে নেমে পড়েন ইলিশ শিকারে। সারা রাতে ইলিশ শিকার করে ভোরের দিকে নদীপাড়ে অস্থায়ী বাজার বসান। দূরদূরান্তের ক্রেতা এসে ইলিশ কিনে নিয়ে যান।
মেঘনা নদী থেকে মা ইলিশ ধরে অস্থায়ী হাটে বিক্রি করছেন জেলেরা। দিনের বেলায় প্রশাসনের অভিযান ও তৎপরতা থাকলেও রাতে অরক্ষিত হয়ে ওঠে নদী। নিরাপত্তাজনিত কারণে রাতে অভিযান চালাতে পারে না স্থানীয় প্রশাসন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই মা ইলিশ ধরার উৎসবে মেতে ওঠেন জেলেরা।
উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিন চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের সাজু মোল্লার গাট, চান্দারখাল, পানিরঘাট, পুরানভেরি, মাস্টারঘাট সংলগ্নে মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরা কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ কেজি মা ইলিশ ধরছেন ও বিক্রি করছেন জেলেরা।
মেঘনা তীরের অস্থায়ী হাটগুলোতে প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা। মেঘনা নদীতে মা ইলিশ শিকারে এখন সক্রিয় অন্তত শতাধিক জেলে। গত ১৯ অক্টোবর ইলিশ কিনে লোকজনকে ফিরতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মেঘনা নদীর পাড়ে আশ্রয় কেন্দ্রের পাশে সাজু মোল্লার মাছ ঘাটে- ফারুখ সর্দার, আবুল হোসেন সর্দারের নেতৃত্বে; মাস্টার ঘাটে-রেজাউল গাজির নেতৃত্বে, পুরান ভেরি চান্দারখাল মাছ ঘাটে- শামিম গাজিসহ ৪-৫ জনের নেতৃত্বে এবং হাজিমারা স্লুইস গেট এলাকায় মাছঘাটে গিয়াস মেম্বারসহ ৩-৪ জনের নেতৃত্বে ভোর ও সন্ধ্যার পর ইলিশ বিক্রি হয়।
এছাড়াও খাসেরহাট বাজারে ইলিশ বিক্রির হাট বসানো হচ্ছে প্রতিদিন। নদীর তীরে রাত ৩টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মা ইলিশ নিয়ে ৫-৬টি ট্রলার আসে। এছাড়া রোববার সন্ধ্যায় হায়দরগঞ্জ ও খাসেরহাট বাজারে বরফকল থেকে বরফ নিয়ে মেঘনার চরে যেতে দেখা গেছে, যা দিয়ে শিকার করা ইলিশ সংরক্ষণ করা হবে।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকে মেঘনা নদীতে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে মা ইলিশ জব্দ ও আটকের পর জেলেদের কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।
ইলিশের অভয়ারণ্য রায়পুরের মেঘনা নদীতে ১৬ দিনে পৃথক অভিযানে ১২ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রায় কোটি মিটারের অধিক কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। এরপরও অসাধু লোকজনের অপতৎপরতায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সফলতা ম্লান হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত অভিযান, অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরি ও বিক্রি বন্ধে অভিযান না করা এবং প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়হীনতায় ইলিশ শিকার ও বেচাকেনা বন্ধ হচ্ছে না।
তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দাবি, মা ইলিশ শিকারে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত; কিন্তু কিছু জেলে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছেন।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, উপজেলার পদ্মা নদী-সংলগ্ন বিভিন্ন চর ও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইলিশ মাছ ক্রয় ও বিক্রয়ের অভিযোগে ১০ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া অভিযানের সময় প্রায় আট লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৩০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। একই দিন মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে ১০ কেজি ইলিশ এবং এক লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে আটক ব্যক্তিদের ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয়। জব্দ ইলিশ মাছ স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। জব্দ জাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয় ও স্থানীয় জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করা হয়।
রায়পুরে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদ হাসানের ভাষ্য, মেঘনায় অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় বিভিন্ন নদীতে সময় দিতে হচ্ছে। মা ইলিশ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
