কী সন্তান প্রসব করেছেন সঙ্গে সঙ্গে মায়ের জানার অধিকার আছে: আদালত
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্ম নেওয়া পুত্রসন্তান পালটে কন্যাসন্তান দেয়ার অভিযোগে সোমবার সরেজমিন পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাররাহুম আহমেদ অভিযুক্ত নিউরন হসপিটালে ঘটনার তদন্ত করেছেন। এ সময় তিনি অভিযুক্ত আসামি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।
অভিযুক্তরা আদালতের কাছে শিশুর মা কী সন্তান প্রসব করেছেন সেটা সঙ্গে সঙ্গে তাকে না জানিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নিয়েছিলেন বলে জানান।
এ সময় আদালত বলেন, আমিও একজন মা, কী সন্তান প্রসব করেছেন সেটা প্রত্যেক মা সঙ্গে সঙ্গে জানার অধিকার রাখেন। পরে তিনি আদালতের এজলাসে ফিরে ওই শিশুর পিতৃত্ব নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
এদিকে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে পটিয়া থানার ওসি নুরুজ্জমানকে করা শোকজের জবাবে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিলে ডাক্তাররা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসন্তোষের সম্ভাবনা থাকায় ভিকটিমকে সিভিল সার্জনের কাছে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন- এতে আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য এবং ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ ছিল না। তিনি ব্যাখ্যা তলবের দায় থেকে অব্যাহতির জন্য আদালতে আবেদন করেন।
জানা গেছে, চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ কাঞ্চননগর ডাক্তার চিত্তরঞ্জন শীলের বাড়ির বাসিন্দা দিলীপ শীলের পুত্র সুমন শীল গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই হাসপাতালে তার নবজাতক পুত্রসন্তান পরিবর্তন করে কন্যাসন্তান দেওয়ার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় হাসপাতালের মাসি কাকলি (৪০), নার্স থিম চাকমা (২৫), ডা. নওসীন ও ওয়ার্ড বয় চন্দনকে (২৫) আসামি করা হয়।
মামলার বাদী সুমন শীল ওই ঘটনার পর প্রথমে ৯ সেপ্টেম্বর ও পরে ১৬ অক্টোবর দুই দফায় থানায় অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন; কিন্তু ডিউটি অফিসার তা গ্রহণ করেননি। পরে ওসিকে জানানো হলে তিনি আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
শিশুর পিতা তার কাছে হস্তান্তর করা কন্যাশিশুর প্রকৃত পিতৃত্ব নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করে ১৯ অক্টোবর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহীনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তাররাহুম আহমেদ মামলা কেন নেওয়া হয়নি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতকে জানাতে পটিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে সোমবার সকালে ওসি নুরুজ্জমান ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
অ্যাডভোকেট শাহীনা আক্তার জানান, সোমবার বেলা ১১টায় আদালতের বিচারক তাররাহুম আহমেদ নিজেই নিউরন হসপিটালে যান। এ সময় পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) যযৎসু যশ চাকমা, বাদীর আইনজীবী, শিশুর মা ও পিতাসহ পটিয়া থানার পুলিশ সেখানে যান। আদালত বাদীর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন এবং হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা ও অভিযুক্তদের সঙ্গেও কথা বলেন। পরে বিচারক আদালতে ফিরে এজলাসে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় নতুন করে আদেশ প্রদান করেন। আদেশে আদালত শিশুর পিতৃত্ব নির্ধারণে পিবিআইকে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
পটিয়া থানা ওসির ব্যাখ্যা
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু লোক তার ছেলে সন্তানের পরিবর্তে স্ত্রীকে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে মর্মে বুঝিয়ে দেয়। বর্ণিত বিষয়ে বাদী নিউরন বর্ণিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে তারা জানান নাই মর্মে জানান। তখন বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, হাসপাতাল ও ডাক্তারি বিষয়ক ঘটনা হওয়ায় ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিভাবক সিভিল সার্জন হওয়ায় তাদের প্রথমে নিউরন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অথবা সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম বরাবরে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ প্রদান করি।
এছাড়া সিভিল সার্জনের অনুমতি ব্যতীত উল্লেখিত হাসপাতালে পুলিশ তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে ডাক্তাররা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসন্তোষসহ কর্মবিরতিতে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এতে আইনসহ জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকায় আমি তাৎক্ষণিক উপরে উল্লেখিত পরামর্শ প্রদান করি। এতে আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য এবং ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ ছিল না। এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়টি সদয় বিবেচনাপূর্বক ব্যাখ্যা তলবের দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করা হয়।
