খাদিজা বদলে দিয়েছেন মানুষের চিন্তাধারা
সফিকুল ইসলাম, জলঢাকা (নীলফামারী)
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম
খাদিজা বেগম। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার এক সাধারণ নারী আজ অনন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি খাদিজা বেগম। কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী। এক সময় জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া খাদিজা আজ নিজের পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন কৃষিখামার। যা এক সম্ভাবনাময় কৃষি উদ্যোগ। শুধু তার ভাগ্যই বদলায়নি, বদলে দিয়েছে মানুষদের চিন্তাধারাও।
স্বামী মারা যাওয়ার পর ভেঙে পড়েছিলেন খাদিজা। একাকীত্বের সেই সময়টায় জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছিলেন মাটির কাছাকাছি গিয়ে। শখের বশে পতিত জমিতে লাউ, কুমড়া, আর কিছু সবজি লাগিয়ে শুরু হয় তার কৃষিযাত্রা। সময়ের সঙ্গে সেই শখই পরিণত হয় আত্মনির্ভরতার পথে প্রথম পদক্ষেপ। তার ছেলে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসে অ্যারাবিকা ও রোভাস্ট জাতের কফি গাছ এবং কিছু ড্রাগন ফলের চারা। সেই চারাগুলোই আজ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে খাদিজা বেগমের ৫ বিঘা জমিতে রয়েছে প্রায় ২৬০টি ড্রাগন গাছ, ২ হাজার কফি গাছ এবং আরও ২০ প্রজাতির ফলের গাছ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন শৈল্পিকভাবে সাজানো কোনো উদ্যান। কিন্তু কাছে গেলেই চোখে পড়ে ফলভরা শাখা আর যত্নে গড়া জীবনের গল্প।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে খাদিজা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর সব কিছু ফাঁকা মনে হতো। তখন ভাবলাম, পতিত জমিগুলোকে যদি জীবনের নতুন আশ্রয় বানাতে পারি! সে থেকেই স্বপ্ন ও পরিশ্রম শুরু। এখন এই বাগানই আমার স্বপ্নসারথী, আমার সন্তানদের মতো। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এ বাগান থেকে বছরে ৬ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। সামনে আরও কিছু নতুন ফল নিয়ে কাজ করতে চাই।
শুধু নিজের জীবনই নয়, এখন তিনি অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করছেন। তার উদ্যোগ দেখে অনেক বেকার তরুণ-তরুণী এখন ড্রাগন ও কফি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খাদিজার বাগান জলঢাকা উপজেলায় কৃষি উদ্ভাবনের এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে। খাদিজা বেগম এখন শুধু একজন সফল উদ্যোক্তাই নন বরং তিনি এক সাহসী নারীর প্রতিচ্ছবি, যিনি প্রমাণ করেছেন, মন থেকে চাইলেই পতিত জমিও হয়ে উঠতে পারে জীবনের আশ্রয়, আর এক ফোঁটা মাটিতেও জন্ম নিতে পারে নতুন স্বপ্নের অঙ্কুর।
