দুর্বৃত্তদের বেধড়ক লাঠিপেটা, মাথায় রক্তক্ষরণ; লাইফ সাপোর্টে কিশোর শিহাব
তানজিমুল হক, রাজশাহী
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে কিশোর শিহাব আলী (১৭)। আইসিইউর বাইরে তার বাবা-মাসহ স্বজনরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটাই প্রার্থনায়— সৃষ্টিকর্তা যেন তাদের ছেলেকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেন।
শিহাব চলতি বছর এসএসসি পাস করেছে। সে
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান রিপনের
একমাত্র ছেলে এবং দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড়। গত ২০ অক্টোবর রাত আটটার দিকে
দুর্বৃত্তরা অতর্কিতভাবে শিহাবের ওপর হামলা চালায়। তার শরীরজুড়ে লাঠির আঘাতের
চিহ্ন, তবে সবচেয়ে গুরুতর আঘাত মাথায়— প্রচুর রক্তক্ষরণে শিহাব জ্ঞান হারায়।
হামলার পর থেকেই সে অচেতন। এরই মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হলেও হাত-পা বা শরীরের অন্য
কোনো অঙ্গে সাড়া নেই। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ঘটনায় শিহাবের বাবা রিপন ২৪ অক্টোবর
শুক্রবার দিবাগত রাতে নয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও আট-নয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে
গোদাগাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলেন— রতন আলী (৩২), মো. কানন (২২),
সুজন আলী (৩২), ইয়ার উদ্দিন (৩২), মো. শরীফ (৩৫), মো. রাব্বি (২৫), মো. হালিম (৩০)
ও মো. কলিম (৩২)। এরা সবাই স্থানীয় বান্দুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা।
শিহাবের স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন
সন্ধ্যায় শিহাব বাবার ফলের দোকান বন্ধ করে নিকটাত্মীয় তারেক ও হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে
বেড়ানোর উদ্দেশ্যে পাশের বান্দুড়িয়া এলাকায় যায়। তেতুলতলা এলাকায় পৌঁছালে একজন
ব্যক্তি তাদের পথরোধ করে। এসময় শিহাব মোটরসাইকেল থেকে নেমে যায়। কয়েক সেকেন্ডের
মধ্যেই আট-দশজন দুর্বৃত্ত হাতে টর্চ ও লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসে। শিহাবের সঙ্গে থাকা
তারেক ও হাবিব প্রাণ বাঁচাতে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু শিহাব দৌড়ে মাঠের
ভেতর প্রবেশ করলে দুর্বৃত্তরা তাকে তাড়া করে পুকুরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করে। এরপর
তারা পুকুরে নেমেই শিহাবকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। পরে তাকে টেনে তুলে আরও লাঠিপেটা
করে। একপর্যায়ে শিহাব ফোন বের করে কারও সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা
ফোন ছিনিয়ে নেয় ও আবারও তাকে পেটায়। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারায়।
দুর্বৃত্তরা তখনও তাকে পেটাতে থাকে এবং পরে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
ঘটনার বিষয়ে শিহাবের খালাত ভাই মাসুদ
রানা বলেন, স্থানীয় এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে
যাই। তখন শিহাবের জ্ঞান ছিল না। তাকে উদ্ধার করে প্রেমতলী উপজেলা
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
রাত সাড়ে দশটার দিকে শিহাবকে রামেক
হাসপাতালের চার নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার তাকে আট নম্বর ওয়ার্ডে
স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে বুধবার আইসিইউতে নেওয়া হয়। শিহাবের
মাথায় অস্ত্রোপচার করেছেন হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান চিকিৎসক ডা.
মঞ্জুরুল হক।
শনিবার দুপুরে আইসিইউর সামনে শিহাবের
বাবা-মা ও নিকটাত্মীয়দের কান্না আর প্রার্থনায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। শিহাবের মা
শারমিন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলেটা আমার বাঁচবে কি না জানি না। ওর অবস্থা
খুব খারাপ। ঘটনার পর থেকে কথা বলতে পারছে না। কেন এমন মারধর করা হলো আমরা জানি না।
যারা ওর সঙ্গে এমন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
শিহাবের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে
জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা গোলাম মোস্তফার সঙ্গে
ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর
কুমার বিশ্বাস বলেন, আহত শিহাবের বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে তার শারীরিক অবস্থা ও
চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ নেব।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ছেলেটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা মামলাটি
গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি এবং আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুত
তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
