Logo
Logo
×

সারাদেশ

গাজীপুরে মহাসড়কে ফেলা হচ্ছে সিটির ময়লা আবর্জনা, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারী

Icon

মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, গাজীপুর

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৭ এএম

গাজীপুরে মহাসড়কে ফেলা হচ্ছে সিটির ময়লা আবর্জনা, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারী

উত্তরার আবদুল্লাহপুর পেরোলেই টঙ্গী শহর। এখান থেকেই শুরু গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক সীমানা। সীমারেখার শুরুতেই যেন দেখা মেলে অব্যবস্থাপনার চিত্র। রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশজুড়ে জায়গায় জায়গায় জমে থাকা আবর্জনার স্তূপ একটানা চলে গেছে চান্দনা চৌরঙ্গী ভাস্কর্য পর্যন্ত। চৌরাস্তা থেকে শহরমুখী পথে পা রাখলেই একই দৃশ্য।

শিববাড়ি সড়ক, লক্ষ্মীপুরা,দক্ষিণ ছায়াবীথি, জোড়পুকুর, হারিনাল কিংবা রেল জংশন প্রতিটি এলাকাই যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

শিল্প অধ্যুষিত দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুর। কিন্তু এই সিটির রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহর হিসেবেও গাজীপুরের নাম রয়েছে। যেখানে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে এখন টেকাই দায়। এসব ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের ওপরে।

স্থানীয়রা বলছেন, ময়লা-আবর্জনা সড়ক, মহাসড়কের পাশেসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি চলাচলসহ নানা সমস্যায় পড়েছেন তারা। নগরবাসীর অভিযোগ, একটি সুন্দর শহরের স্বপ্ন ছিল গাজীপুরবাসীর। কিন্তু সিটি গঠনের দীর্ঘদিন পরও তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। এখন যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপের কারণে নাকে রুমাল চেপে চলাচল করতে হয় তাদের। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে স্কুল, কলেজ ও মসজিদে আসা যাওয়া ও যানবাহন চলাচলে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গাজীপুরে শোধনাগার না থাকায় কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে ওই দুই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী ও আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন অধিক ঝুঁকিতে।

এলাবাসী জানায়, জেলায় বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় কয়েক বছর ধরেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার তেলিপাড়া, সালনা, গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর, ভবানীপুর, হোতাপাড়া, শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী, এমসি বাজার, জৈনা বাজার এলাকায় বর্জ্যের বিশাল স্তূপ রাখা হয়েছে। এছাড়া শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বর্জ্য। অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কড্ডা বাইমাইল এলাকায়ও ময়লার ভাগাড় চোখে পড়েছে। জয়দেবপুর বাইপাস-মীরের বাজার সড়কের ঝাঝর, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মরকুন এলাকায়ও মহাসড়কের পাশে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। কালিয়াকৈর নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় তৈরি হয়েছে ময়লার পাহাড়। এসব বর্জ্যের কারণে আশপাশের এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে রাখা বর্জ্যের উত্কট গন্ধে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চক্রবর্তী এলাকার বাসি হাবিবুর রহমান বলেন, একসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতাম। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। মহাসড়কের পাশে রাখা বর্জ্যের দুর্গন্ধে হাঁটা তো দূরের কথা বমি চলে আসে।

কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চলাচল সেই মহাসড়কের পাশে কড্ডা এলাকায় ময়লা ফেলে রিতিমতো পাহাড় তৈরি করা হয়েছে। গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য এনে এখানে রাখা হয়। এসব বর্জ্যের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

গাজীপুর পরিবহণের চালক জব্বার আলী বলেন, আগে এই ময়লার সমস্যা ছিল না। এখন মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলে যানবাহন চলাচলেও সমস্যা সৃষ্টি করছে বিশেষ করে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় খুবই খারাপ অবস্থা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) এর গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, দীর্ঘদিনেও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ একটি কার্যকর ও স্থায়ী বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন বা আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করতে পারেনি। ফলে মহাসড়ক ও জনবহুল এলাকার পাশে আবর্জনার পাহাড় তৈরি হচ্ছে, যা পরিবেশ দূষণ এবং জনস্বাস্থ্যের অবনতির অন্যতম কারণ। শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সিটি কর্পোরেশনের এই উদাসীনতা নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল আলম বলেন, সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে রাখা দুঃখজনক। আমরা কোনোভাবেই এটা বন্ধ করতে পারছি না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, গাজীপুরে আগে থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল না। এখনো একই অবস্থা। এত বড় সিটি কর্পোরেশনে যে পরিমাণের জনবল প্রয়োজন তা আমাদের নেই। সম্প্রতি কিছু লোক আমরা নিয়োগ করেছি তাদের মধ্যে অল্প কিছু যোগদান করেছে বাকিরা এখনো যোগদান করেনি। চেষ্টা করছি সুপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম