Logo
Logo
×

সারাদেশ

মুসলিম রীতি মেনে আজ বিয়ে

চীনা যুবকের সঙ্গে যেভাবে প্রেমের সম্পর্ক হয় সুরমার

Icon

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম

চীনা যুবকের সঙ্গে যেভাবে প্রেমের সম্পর্ক হয় সুরমার

ওয়াং তাও ও সুরমা। ছবি: যুগান্তর

ভালোবাসা যে কোনো দেশ, ধর্ম বা দূরত্ব মানে না—এমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনার সাক্ষী হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা। প্রেমের টানে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন চীনা যুবক ওয়াং তাও। তার গন্তব্য—নাসিরনগরের কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তরুণী সুরমা আক্তারের বাড়ি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব, আর সেই বন্ধুত্ব থেকে জন্ম নেয় গভীর ভালোবাসা। অবশেষে সেই ভালোবাসাকে বাস্তবে রূপ দিতে ওয়াং তাও এসেছেন দূর চীন থেকে, সুরমার সঙ্গে জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হতে।

রোববার (২ নভেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে মুসলিম রীতি মেনে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এই আন্তর্জাতিক প্রেমিকযুগলের বিয়ে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সুরমার পরিবার।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগে ‘ওয়াল টক’ নামের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় নাসিরনগরের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তার এবং চীনের হুয়ানান প্রদেশের যুবক ওয়াং তাওর। নিয়মিত কথোপকথনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সময়ের ব্যবধানে সেই সম্পর্ক পরিণত হয় প্রেমে। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা এতটাই দৃঢ় হয় যে, দুই পরিবারই তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে রাজি হয়ে যায়।

গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে তাকে নিয়ে আসেন সুরমার পরিবারের সদস্যরা। এরপর শনিবার সকালে চীনা যুবককে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা চলে আসেন নাসিরনগরের কোনাপাড়া গ্রামে। খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সৃষ্টি হয় ব্যাপক চাঞ্চল্যের। গ্রামের শত শত মানুষ ছুটে আসে একনজর দেখতে ‘চীনা জামাই’কে।

সুরমা আক্তারের মা নুরেনা বেগম বলেন, মেয়ের ভালোবাসার টানে সেই চীন থেকে ছেলেটি চলে এসেছেন। সে বর্তমানে কোনো ধর্ম মানে না। তবে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন এবং মুসলিম রীতি অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট অফিসার এসআই মো. জাহান-ই-আলম বলেন, চীনা যুবক নাসিরনগরে আসার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। তার পাসপোর্ট ও কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি চীনের নাগরিক। শুনেছি, রোববার জেলা জজ আদালতে মুসলিম রীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ে হবে।

ওয়াং তাও চীনের হুয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওর ছেলে। অন্যদিকে সুরমা আক্তার বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দুই দেশের ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পার্থক্য সত্ত্বেও এই যুগল প্রমাণ করেছেন, সত্যিকারের ভালোবাসা কোনো বাধা মানে না।

গ্রামজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ‘চীনা জামাই’। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, এ যেন সিনেমার মতো ঘটনা! কেউ আবার হাসিমুখে বলছেন, প্রেম মানে শুধু অনুভূতি নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন।

আগামী রোববারের বিয়েকে ঘিরে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে সুরমাদের বাড়িতে। গ্রামের মানুষজনও আগ্রহভরে অপেক্ষা করছেন দিনটিকে দেখার জন্য—যেদিন ভালোবাসার টানে বিদেশ থেকে আসা এক চীনা যুবক বিয়ে করবেন বাংলাদেশের এক তরুণীকে।

ভালোবাসার জয়গান যেন ভেসে বেড়াচ্ছে নাসিরনগরের আকাশে—যেখানে হৃদয়ের টানে মিলছে দুই ভিন্ন দেশের দুই প্রাণ। 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম