Logo
Logo
×

সারাদেশ

তিস্তা যমুনা ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে পৌঁছেনি সৌদি দুম্বার মাংস

Icon

সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৮ পিএম

তিস্তা যমুনা ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে পৌঁছেনি সৌদি দুম্বার মাংস

গাইবান্ধার সাত উপজেলার  ৮২টি ইউনিয়নে দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য সৌদি দুম্বার মাংস এলেও তা জোটেনি তাদের ভাগ্যে। এসব মাংস গেছে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, চেয়ারম্যান মেম্বার আর সামর্থ্যবান ও ধনী পরিবারে।

দুস্থ মানুষ তো দূরের কথা, ১৬৫টি চরাঞ্চলের দুর্ভাগা মানুষের ভাগ্যেও জোটেনি দুম্বার মাংস। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন- এতিমখানায় দুম্বার মাংস বিতরণ করা হয়েছে।

সরকারিভাবে বলা হয়, শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে সৌদি সরকারের কুরবানির মাংস গাইবান্ধায় পাঠানো হয় দুস্থ ও গরিব মিসকিনদের মধ্যে বিতরণের জন্য। বরাদ্দকৃত দুম্বার গোস্তের কার্টন পাঠানো হয় গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কাছে। জেলার সাত উপজেলার দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য এসব খোলা কার্টন উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেন গত শনিবার। এসব কার্টন থেকে অনেক দুম্বার মাংস বের করে নেওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

সেই অনুযায়ী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের জন্য ৪৭ কার্টন, ফুলছড়ি উপজেলায় ৭ ইউনিয়নের জন্য ১৯, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের জন্য ৪২, সাঘাটা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের জন্য ২৮, পলাশবাড়ি উপজেলার ৯ ইউনিয়নের জন্য ২৫, সাদুল্লাপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়নের জন্য ৩০ এবং গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের জন্য ৩৬ কার্টনসহ জেলায় মোট ২২৭ কার্টন দুম্বার মাংস পাঠানো হয়।

এসব দুম্বার গোস্তের কার্টন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় উপজেলা পরিষদ থেকে। উপজেলা পরিষদ ও ত্রাণ অফিস থেকে গোপনে খবর দেওয়া হয় চেয়ারম্যান মেম্বার ও কাছের মানুষদের। তারপর দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত দুম্বার মাংসের কার্টন উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর বেলকা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওখানকার দরিদ্র গ্রামবাসী জানে না দুম্বার গোস্তের খবর। চরের বাসিন্দা দরিদ্র শামসুল হক মাইজভাণ্ডারি বলেন, ইশ কত দিন থেকে মুখে মাংস পরে না। কিনেও খেতে পারি না। কামাই নাই। গান গেয়ে কামাই করে সংসার চালাতাম এখন অসুখ নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বিছানায় পড়ে আছি; কিন্তু এক টুকরা দুম্বার মাংসও পেলাম না। মুখে মুখে দুম্বার গোস্তের কথা শোনা গেলেও এসব মাংস কোথায় গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বোয়ালী গ্রামের বুলবুলি বেগম বলেন, সারা বছর অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাই। মাংস মুখে পরে না। দুম্বার মাংস হামাক না দিয়া কাকে দেওয়া হলো তা আমরা বুঝতে পারলাম না।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউপির সাবেক মেম্বার রেজাইল হক জানান, চরের মানুষ দুম্বার মাংসের কথা জানে না। তাছাড়া সরকারি সাহায্য তিস্তা যমুনার চরাঞ্চলের মানুষের হাতে আসার আগেই সব হাওয়া হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, গাইবান্ধার দুটি সরকারি এতিমখানায় কোনো দুম্বার মাংস দেওয়া হয়নি।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎবন্ধু মিত্র বলেন, তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি কাগজে দুস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করার কথা থাকলেও সম্ভাব্য গোলমাল এড়াতে দুম্বার মাংস অধিকাংশই এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম