কাঁদছে ১১ মাসের শিশু
অজ্ঞাত স্থান থেকে যে বার্তা দিলেন সেই কলেজশিক্ষিকা
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মাকে কাছে না পেয়ে কাঁদছে ১১ মাসের শিশু জান্নাতুল। মেয়ে শিশুকে ফেলে নিরুদ্দেশ হওয়া সেই কলেজশিক্ষিকা মা সাবজান অবশেষে গোপন অবস্থান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েছেন। তবে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটি সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠিয়ে ফের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে নেন নিজেকে।
এদিকে তার ১১ মাসের কন্যাশিশুকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে কাজ করছেন এক স্বেচ্ছাসেবী।
ফরিদপুর সিটি কলেজের ওই সিনিয়র শিক্ষিকা সাবজান নাহারের ১১ মাসের দুধের শিশু জান্নাতুল রওজা আতিকাকে ফেলে নিরুদ্দেশ যাত্রার বিষয়ে যুগান্তর অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি স্বেচ্ছাসেবী আবরার নাদিম ইতুর হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠান।
ইংরেজিতে লেখা মেসেজের শুরুতেই তিনি দাবি করেন- ‘এক কাপড়ে জীবন নিয়ে শুধু বেঁচে পালিয়েছি। সাইকো একজন মানুষের সঙ্গে মুখ বন্ধ করে প্রাণটা কোনোরকম বেঁচেছিল, এত জুলুম, এত টর্চার একজন মানুষ করতে পারে, তাই জানা ছিল না।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবজান নাহার আকস্মিক কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে এভাবে পালিয়ে যাননি। বরং যেদিন তিনি নিরুদ্দেশ হন, সেদিনই তিনি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগও দেন স্বামীর বিরুদ্ধে এবং একইদিনে রাজবাড়ী পৌরসভার ৩-৪নং ওয়ার্ডের কাজী বিল্লাল হোসাইনের মাধ্যমে রাজা মিয়াকে একটি তালাকনামাও লিখে পাঠান।
তিনি ওই বার্তায় এ কথাও উল্লেখ করে বলেছেন- ‘ডিভোর্স ২১ অক্টোবরেই পাঠিয়েছি। জাস্ট তিন মাস সময় হলেই ফিরব ইনশাআল্লাহ।’
তবে তার প্রাণের ঝুঁকির কারণে তিনি পালিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও বাসা থেকে বের হয়ে তিনি সেদিন থানায় যান এবং স্বামী রাজা মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগও করেন। অথচ তিনি তখন তার মেয়ে আতিকার বিষয়টি পুলিশকে জানাননি অথবা কী ধরনের তাৎক্ষণিক ঝুঁকির মুখে ছিলেন তাও ওই অভিযোগে উল্লেখ করেননি।
সাবজান নাহারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিষয়টিও তুলে ধরেছেন- তার এই শিশু বাচ্চাকে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে। এক প্রশ্নের জবাবে সূত্রটি বলেছে, মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গেলে তো আর নতুন কারো সঙ্গে সংসার করতে পারবেন না! কেন শিশু আতিকাকে তিনি সঙ্গে নিয়ে গেলেন না?
আর তার স্বামী রাজা মিয়ার সন্দেহ- তিনি এবার কারো সঙ্গে পালানোর পরিকল্পনা থেকেই এমনটি করেছেন। গত ২১ অক্টোবর সকালে কলেজে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে আর ফেরেননি সাবজান নাহার। এরপর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে গিয়ে তার স্বামী রাজা মিয়া জানতে পারেন, তার বিরুদ্ধেই টাকার দাবিতে মারধরের অভিযোগ করে গেছেন সাবজান।
শিশু বাচ্চাটির কথা জানতে পেরে স্বেচ্ছাসেবীরা বাচ্চাটির খবর নিতে গিয়ে এসব জানতে পারেন। ওই টিমের আবরার নাদিম ইতু বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কী হয়েছে সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। সেটি আইনগতভাবে সমাধান হবে। আমরা মেয়েটিকে তার মাতৃস্নেহে ফিরিয়ে দিতে চাই।
ইতু বলেন, শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর নির্দেশ কুরআনে রয়েছে। আইনগতভাবেও ১৮ বছর পর্যন্ত মায়ের কাছেই শিশুকে রাখার বিধান রয়েছে। অথচ তিনি এসবের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না! শিশুটি মুখ ফুটে সেই কথা বলতে পারছেন না বলেই কি তিনি সুযোগ নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নও করেন তিনি।
এর আগেও সাবজান নাহার প্রথম ও দ্বিতীয় স্বামীকেও ডিভোর্স দেন। ওই স্বামীদের ঘরে তারই গর্ভজাত ছোট মেয়ে শিশু ছিল। মায়ের স্নেহ থেকে যারা চিরবঞ্চিতই রয়ে গেছে।
