রোগী নয়, কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কাজেই ছুটছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২২ পিএম
নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. জয়নুল আবেদীন। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অফিসের দায়িত্বে থাকার কথা থাকলেও তিনি নিয়মিত সময় কাটান প্রাইভেট হাসপাতালে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সও ব্যবহার করেন নিজের ব্যক্তিগত কাজে। এমন অভিযোগে সমালোচনার কেন্দ্রে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. জয়নুল আবেদীন। সরেজমিনে অনুসন্ধান এবং বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে নাঙ্গলকোটে যোগদানের পর থেকেই অফিস সময়েই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিজ কক্ষে ফি নিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন তিনি। পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে নজর এড়াতে সরকারি হাসপাতাল গেইট সংলগ্ন ল্যাব ওয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখা শুরু করেন। অফিসে থাকার কথা থাকলেও ওই সময়গুলো তিনি প্রায়ই সেখানেই থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রতি রোববার দোলখাঁড় বাজারের সাফিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রতি মঙ্গলবার নাঙ্গলকোট আল্ট্রা মডার্ন হাসপাতাল এবং প্রতি বুধবার নাঙ্গলকোট ট্রমা হাসপাতালে বসেন তিনি। এসব হাসপাতালে যাতায়াতে ব্যবহার করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি।
অভিযোগ রয়েছে, একই অ্যাম্বুলেন্সে তিনি প্রতি রবি,মঙ্গল ও বুধবার নিজের কুমিল্লাস্থ বাসায়ও যাতায়াত করেন। এতে জরুরি রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন।
আরও জানা গেছে, এসব হাসপাতালে তিনি রোগী দেখুক বা না দেখুক—প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে অভিযানের ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজের ব্যক্তিস্বার্থে সরকারি সময়, সম্পদ ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করছেন। এতে সরকারি সেবা ব্যাহত হচ্ছে, চিকিৎসা নিতে এসে অনেক রোগী ডাক্তারকে খুঁজে পান না, আবার অ্যাম্বুলেন্সও থাকে না।
উপজেলার বেশ কয়েকটি অবৈধ ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পরিচালনায় সহযোগিতা করেন বলেও অভিযোগ আছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টাকা নিলেও প্রশাসনের নজরদারি নেই।
রোববার (৯ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দোলখাঁড় সাফিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুপুর ১টার দিকে রোগী দেখতে দেখা যায় এবং বুধবার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ল্যাব ওয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে রোগী দেখতে দেখা যায় তাকে। এছাড়াও শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) নাঙ্গলকোট আলট্রা মডার্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি প্রতি মঙ্গলবার দুপুর ২ টা থেকে সেখানে রোগী দেখেন। যদিও সরকারি হাসপাতালে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত তার ডিউটি করার কথা।
উপজেলার মুরগাও গ্রামের আব্দুর রব বলেন, আমার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ছিলো না, খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বাড়িতে যাচ্ছেন।
নাঙ্গলকোট সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক সাফায়েত হোসেন বলেন,সাপ্তাহে তিনদিন স্যার অ্যাম্বুলেন্সে করে তার বাসায় (কুমিল্লা) যাতায়াত করেন। এসময় অনেক জরুরি রোগী আমাকে ফোন করলেও আমি সেবা দিতে পারি না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. জয়নুল আবেদীনের কাছে এসব অভিযোগের জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
কুমিল্লা জেলা ডিপুটি সিভিল সার্জন ডা. সারোয়ার রেজা বলেন, অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের জন্য বরাদ্দ। কোনো সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করতে পারেন না। অফিস, প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখারও কোন নিয়ম নাই। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

