Logo
Logo
×

সারাদেশ

পাবনায় সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভাইরাল সেই যুবক জামায়াত কর্মী!

Icon

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫০ পিএম

পাবনায় সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভাইরাল সেই যুবক জামায়াত কর্মী!

পাবনার ঈশ্বরদীতে বৃহস্পতিবার বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষকালে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভাইরাল যুবক জামায়াতের কর্মী।

প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী এবং দলীয় সূত্রের মাধ্যমে যুগান্তরের অনুসন্ধানে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ঘটনার পর থেকে ওই যুবক গা-ঢাকা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের জগির মোড় ও চর আলহাজ মোড় এলাকায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা আমির ও পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলসহ উভয় দলের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন।

এ সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে এক যুবকের গুলি করার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, ওই যুবক তার সামনে থাকা প্রতিপক্ষের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণ করছেন। ঘটনার পর থেকে ভাইরাল হওয়া যুবকের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

প্রথমে জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- ওই যুবক বিএনপি কর্মী এবং তিনি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালান।

এরপর রাতেই বিএনপি নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির মিডিয়া সেলের বিবৃতিতে দাবি করা হয়- ওই যুবক জামায়াতের কর্মী।

যুগান্তরের অনুসন্ধানেও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া ওই যুবকের সন্ধান মেলে।

জানা যায়, ওই যুবকের নাম তুষার মণ্ডল। তিনি ঈশ্বরদী পৌর শহরের ভেলুপাড়া এলাকার তাহের মণ্ডলের ছেলে ও পাবনা জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মণ্ডলের অন্যতম সহচর এবং জামায়াতের সক্রিয় কর্মী।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই ভাইরাল হওয়া তুষার গা-ঢাকা দিয়েছেন।

শুক্রবার তুষারদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তুষারের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, সে কোথায় আছে আমরা জানি না। তার মোবাইলও বন্ধ রয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম শরীফ বলেন, জামায়াত কর্মী তুষার মণ্ডল প্রকাশ্য দিবালোকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করেছে। তুষার জামায়াত নেতা তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মণ্ডলের সন্ত্রাসী সব কর্মকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী।

সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুর রহমান হামদু মেম্বার বলেন, বৃহস্পতিবার জামায়াতের পূর্বনির্ধারিত কোনো গণসংযোগ ছিল না। গণসংযোগে কেউ কখনো গাড়িভর্তি করে অস্ত্র নিয়ে আসে না।

মূলত গত দুই দিন আগের ঘটনার সূত্র ধরেই ওই দিন মক্কেল মৃধা ও তার ছেলের ওপর হামলা করে তালেব মণ্ডল ও তার সমর্থকরা। তালেব মণ্ডল নিজে গাড়ি থেকে অস্ত্র বের করে তার কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা গাড়িতে করে অস্ত্র নিয়ে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। পরে ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসীর ধাওয়ার মুখে নিজেদের গাড়িবহর ফেলে পালিয়েছে তারা। এ সময় সশস্ত্র জামায়াত কর্মীরা সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি করে সেই দায় বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই জেলা জামায়াতের আমির ও এমপি প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভাইরাল হওয়া যুবক জামায়াতের কেউ নন।

তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে তার নির্বাচনি প্রচারণাকালে হামলা চালায়।

বৃহস্পতিবার যা ঘটেছিল

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দুই দিন আগে দলীয় বিষয় নিয়ে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় স্থানীয় জামায়াত নেতা ইকবাল হোসেনের। ওই ঘটনার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডলের নেতৃত্বে জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী সাহাপুর ইউনিয়নের আলহাজ মোড় এলাকায় যান। এ সময় জগির মোড় নামক স্থানে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধা ও তার ছেলে মনিরুল ইসলামকে দেখে অতর্কিত হামলা করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়। এ নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় দুপক্ষের মধ্যে।

এর কিছুক্ষণ পর পার্শ্ববর্তী চর আলহাজ মোড় নামক স্থানে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই দলের সমর্থকরা। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবর্ষণ, আবু তালেব মণ্ডলের গাড়ি ভাঙচুরসহ প্রায় ১০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডল, ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম, সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধা, সাহাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল আলিম বাঁধন, যুবদল নেতা মিলন, রকিবুলসহ দুই দলের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন।

এদিকে ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এটাই প্রথম না। এ বছরের ১৫ মে একই নির্বাচনি এলাকার আটঘরিয়ায় একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ, দলীয় কার্যালয় ও বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

ওই সংঘর্ষের জের চলতে থাকে পুরো মাস ধরে এবং জামায়াতের জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল ও বিএনপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের পরস্পরবিরোধী বেফাঁস বক্তব্য সারা দেশে ভাইরাল হয়।

এছাড়াও ঈশ্বরদীতে আরও দুই দফা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে দুই দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম