Logo
Logo
×

সারাদেশ

আট কুকুর ছানাকে পুকুরে ডুবিয়ে মারল কর্মকর্তার স্ত্রী

Icon

আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৬ পিএম

আট কুকুর ছানাকে পুকুরে ডুবিয়ে মারল কর্মকর্তার স্ত্রী

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মা কুকুরের অগোচরে ৮টি ছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সব মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় ও নিন্দার ঝড় ওঠে।

একইসঙ্গে এতে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জানা গেছে, রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকায় গেজেটেড ভবনে বসবাসরত ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তার স্ত্রী নিশি আক্তার অমানবিকভাবে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে মেরে ফেলেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গেজেটেড ভবনে মা কুকুর সম্প্রতি আটটি ছানা প্রসব করে। রোববার রাতে ছানাগুলোকে দেখতে না পেয়ে মা কুকুরটি হন্যে হয়ে এদিক-সেদিক খোঁজ করার পাশাপাশি বিকটভাবে কাঁদতে থাকে। সারারাতই মা কুকুরটিকে অফিসার্স ক্লাব এবং আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাসার দরজায় দরজায় ঘুরতে দেখা গেছে। এ সময় খাবার দিলেও মা কুকুর তা মুখে নেয়নি। আমরা তখনও জানি না ছানাগুলো নেই। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি।

তিনি আরও বলেন, সোমবার সকালে ইউএনওর আবাসিক ভবনের সামনে দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে কুকুর ছানার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ সময় তার ছোট ছেলে বলে ওঠে- আম্মু কুকুরের বাচ্চাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এ কথা শুনে নয়ন সাহেব দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে পুকুরে গিয়ে দেখি মুখ বাঁধা একটি বস্তা ভাসছে। তুলে এনে বস্তার মুখ খুলে দেখা যায় ছানাগুলো মারা গেছে। এ ঘটনাটি ছবিসহ দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কুকুর মেরে ফেলার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতে থাকেন অনেকেই। নিজের ফেসবুকে মন্তব্যে ঈশ্বরদীর সাবেক ইউএনও সুবির কুমার দাশ লেখেন- ‘এই হত্যাকাণ্ডর বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

অন্যরা লিখেন- ‘মানুষ নামের কলঙ্ক ওই ব্যক্তি। ঘৃণা প্রকাশ করছি’, ‘ঘৃণিত কাজের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত’, ‘বিচার চাই’, ‘প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না। যে ডুবিয়ে মেরেছে সেও একদিন ডুবে মরবে- না হলে তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ডুবে মরবে’, ‘ভাষা নেই কিছু বলার, তদন্ত করা হোক, কে এই মানুষ নামের কলঙ্ক’।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী অভিযুক্ত নিশি আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার স্বামী হাসানুর রহমান নয়ন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। এর বেশি আর কিছু বলতে পারছি না।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন জানান, এটা খুবই অমানবিক। মা কুকুর ইতোমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে আমাদের লোকজন চিকিৎসা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, পরিষদ চত্বরে সংঘটিত এ ঘটনায় আমি চরমভাবে মর্মাহত। সকালে পরিষদের অফিসারদের নিয়ে এক দফা মিটিং করেছি। তদন্ত করা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম