ব্রাকসু নির্বাচন নিয়ে ভিসির দপ্তর অবরোধ, ছাত্রদল-শিবিরের বাগবিতণ্ডা
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচনের তফশিল স্থগিত ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে ভিসির কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন। সোমবার গভীর রাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সাড়ে ৫ ঘণ্টা ভিসিকে অবরোধ করে রাখেন।
এর আগে সোমবার বিকালে মনোনয়নপত্র বিতরণের দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন ব্রাকসু নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। এর ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনি তফসিল কার্যকর করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর হতে সঠিক, হালনাগাদ ও ত্রুটিমুক্ত হলভিত্তিক ভোটার তালিকা সরবরাহ করা অপরিহার্য। তা করা হয়নি। এছাড়া যে ভোটার তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে তাতে অসঙ্গতি রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের মতে, এমন ভুল তালিকার ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ অব্যাহত রাখা নির্বাচনের ন্যায়সঙ্গতা ও স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এতে প্রার্থীরা জটিলতায় পড়বেন। নির্বাচন কমিশনার ড. মোহসীনা আহসান সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় কমিশন ঘোষণা করেছে, হলভিত্তিক ভোটার তালিকার সব অসঙ্গতি দূর না হওয়া পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণসহ তফশিলের অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
এ তথ্য জানার পরে সোমবার রাতে ভিসি প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের তার দপ্তরে ডাকেন। এ খবর জানার পর গভীর রাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ভিসির দপ্তরে তফশিল অনুযায়ী নির্বাচনের দাবিতে অবস্থান নেন। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ভিসিকে অবরোধ করে রাখেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। এ সময় ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীদের মাঝে বাগবিতণ্ডা হয়। ছাত্রদল আগে থেকেই নির্বাচন পেছানোর দাবিতে অন্দোলন করে আসছিল।
একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভিসি তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ ইয়ামিন জানান, ভোটার তালিকায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। তাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যে ব্রাকসু নির্বাচন স্থগিত করেছে তা সঙ্গতভাবেই করেছে। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে শিবির ও কিছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখে তা শুনে আমরা সেখানে যাই। এ সময় শিবিরের কিছু নেতাকর্মী উদ্ধত আচরণ করলে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। পরে ভিসি সেখান থেকে বেড়িয়ে যান। আমি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাচন চাই।
শিবিরের ভিপি পদপ্রার্থী ও বেরোবির শিক্ষার্থী পরিষদের সভাপতি আহমেদুল আলভীর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যা ঘটেছে তা ভুল বোঝাবুঝির জন্য। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ভিসিকে নির্বাচন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী অনুষ্ঠানের জন্য আবেদন জানাতে যাই। তখন কিছু শিক্ষার্থী নির্বাচন স্থগিত করার প্রতিবাদে ভিসির কার্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পরে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি থাকায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিতাদেশের পর সাবেক ছাত্র সমন্বয়ক ও বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদের নেতা আশিকুর রহমান প্রশাসনিক ভবনের চতুর্থ তলায় নির্বাচন অফিসের বাইরে তালা লাগানোর ঘোষণা দেন। তারা তালা লাগানোর চেষ্টা করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানায়। এ সময় উভয়পক্ষ তুমুল হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এখানে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমি নির্দেশনা দিয়েছি যাতে দ্রুততম সময়ে সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনারকে প্রদান করতে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন অসংগতিগুলো আলোচনা করে সমাধান করতে পারত। নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি, কার্যক্রম চালিয়ে যেতে।
