|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দশ দীর্ঘ বছর নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে পরিবারের কোলে ফিরলেন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সাঁওতাল যুবক সুদাম হেমরম। স্মৃতি হারিয়ে নিজ পরিচয় ভুলে যাওয়া এ মানুষটি কোথায়, কিভাবে হারিয়ে গেলেন এ প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।
চৌদ্দপুরুষের ঠিকানা, মায়ের মুখ, নিজের নাম সব ভুলে ঘুরে বেড়ানো সুদামের পথ শেষে এসে থামে বাংলাদেশে; কিন্তু কিভাবে হাজার কিলোমিটার দূরে ওড়িশা থেকে বাংলাদেশের রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক গ্রামে এসে পড়লেন তিনি, তা এখনো রহস্যময়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাজকর্মী মো. আবদুল গনি ফিটুর চোখে প্রথম ধরা পড়ে অচেনা মানুষটির চোখের অসহায়ত্ব। মানবিকতায় তিনি আশ্রয় দেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং ধীরে ধীরে সুদামের স্মৃতি ফিরে আনার চেষ্টা চালান। কথার ফাঁকে বারবার ‘জয় জগন্নাথ’ উচ্চারণ তার মনে সন্দেহ জাগায়- এই যুবক ভারতের, সম্ভবত ওড়িশার বাসিন্দা। সেখান থেকেই শুরু হয় খোঁজ।
ফিটু যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ হ্যাম রেডিওর সঙ্গে। তাদের মাধ্যমে তথ্য পৌঁছায় পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার হ্যাম নেটওয়ার্কে। কয়েক দিনের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয় এ মানুষটি ময়ূরভঞ্জ জেলার দশ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া সুদাম হেমরম।
এরপর ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বোর্ডের সংগঠক উৎপল রায় বিষয়টি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রি এবং ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন পর্যন্ত তুলে ধরেন। যাচাই-বাছাই শেষে ভারত সরকার নিশ্চিত হয়, বাংলাদেশে পাওয়া এই মানুষটি প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক। শুরু হয় দুই দেশের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, কাগজপত্র তৈরি ও পরিচয় যাচাইয়ের কাজ।
রোববার বেনাপোল পোর্ট চেকপোস্টে দেখা গেল বিরল এক আবেগঘন দৃশ্য। দুই দেশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে যখন সুদাম গেটের ওপারে দাঁড়ালেন অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকা তার মা-বাবা ও ভাই তাকে দেখেই ভেঙে পড়লেন কান্নায়। ভাই ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, বাবা কাঁপা হাতে ছেলের মুখ ছুঁয়ে দেখলেন দশ বছর পর ফিরে পাওয়া একি সত্যিই তাদের সুদাম! মুহূর্তটি দেখে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। উদ্ধারকারী সমাজকর্মী আবদুল গনি ফিটুর প্রতি পরিবার জানায় অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা।
এ বিষয়ে রাজশাহীর অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার অর্ণব ঘোষ বলেন, মানবিক কারণে দুই দেশের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সুদামকে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ তাকে নিরাপদে আশ্রয় দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের কাছে সরবরাহ করেছে এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। মানবতার জায়গা থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে।
